সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

মধ্যবিত্তের কারণেই কি এশিয়ায় নজর সবার?

আপডেট : ২৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০১:৪০ পিএম

মার্কিন মসনদে অধিষ্ঠিত ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চীনকে সাব্যস্ত করেছেন। ট্রাম্প এখানে উদাহরণ কেবল। গোটা বিশ্বই এশিয়া নিয়ে এক রকম শঙ্কা ও সম্ভাবনার দোলাচলে ভুগছে। কারণ কী? বাজার।

এশিয়ার আলোচনায় ঢোকার আগে একটু তথ্যে চোখ বোলানো যাক। নিউজিল্যান্ডের মিনিস্ট্রি অব প্রাইমারি ইন্ডাস্ট্রিজ ও ইকোনমিক ইনটেলিজেন্স ইউনিট যৌথভাবে একটি গবেষণা করেছিল ‘গ্লোবাল মিডল ক্লাস ২০৩০’ শিরোনামে। সেখানে তারা দেখিয়েছে, বৈশ্বিক বাজারের মোট ভোক্তার মধ্যে ২৪০ কোটিই ছিল মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত, ২০২০ সালে এ সংখ্যা বেড়ে ৩৮০ কোটিতে এবং ২০৩০ সাল নাগাদ তা বেড়ে ৫৪০ কোটিতে পৌঁছাবে। আর এই ভোগের পরিমাণ কেমন হবে? ৬৩ লাখ কোটি (ট্রিলিয়ন) মার্কিন ডলার, যা মোট বৈশ্বিক ভোগের ৬৭ শতাংশ।

ফলে বাজারটি বড় শুধু নয়, বিপুল। এই বিপুল বাজারের দখল নিতে সবাই উদগ্রীব থাকবে–এটাই স্বাভাবিক। আর এখানেই চলে আসে এশিয়া প্রশ্ন।

এশিয়ার মধ্যবিত্তদের সম্ভাবনা কতটা? আশঙ্কা কী?

বিশ্বজুড়ে মধ্যবিত্তদের যে রমরমা ভবিষ্যতের নানাবিধ পূর্বাভাস আমরা পাচ্ছি, সেসবের মূল আশার আলো হলো একটি নির্দিষ্ট অঞ্চল। নাম, এশিয়া। এই একটি মহাদেশের ওপর নির্ভর করেই মধ্যবিত্তের আকার বৃদ্ধির আকর্ষণীয় পূর্বাভাস মিলছে। তার কারণ হলো, এশিয়া অঞ্চলে অকল্পনীয় দ্রুত হারে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রসার পরিলক্ষিত হচ্ছে।

এ ব্যাপারে অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স তাদের সাম্প্রতিক শ্বেতপত্র ‘The Future of the Middle Class in Emerging Markets’–এ বলেছে, মধ্যবিত্ত শ্রেণির দ্রুত প্রসারের ওপর অর্থনৈতিক উন্নয়ন অনেকাংশে নির্ভর করে। গত ২ দশক ধরেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির সম্প্রসারণের ওপর ভিত্তি করে বহুজাতিক কোম্পানিগুলোর বিনিয়োগ কৌশল নির্ধারিত হচ্ছে। ২০১৪ সালের পর থেকে বিশ্বের উদীয়মান বাজারগুলোতে মধ্যবিত্তের প্রবৃদ্ধির চিত্রটি বদলে গেছে। ২০১০-এর দশকের মাঝামাঝি এই অঞ্চলে পণ্যের ভোগ কিছুটা কমে গেছে। করোনাভাইরাসের মহামারিও অর্থনৈতিক উন্নতির গতিকে স্লথ করে দিয়েছে। তবে তারপরও দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাসে দেখা যাচ্ছে, বিশ্বের উদীয়মান বাজার হিসেবে পরিচিত ৩২টি দেশে উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে মধ্যবিত্ত শ্রেণির পরিমাণ। এই ৩২টি দেশেই মূলত পুরো বিশ্বের উদীয়মান বাজারভুক্ত অঞ্চলের প্রায় ৯৫ শতাংশ জনসংখ্যার বাস।

অক্সফোর্ড ইকোনমিক্সের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ১ দশকে যে পরিমাণ মানুষ বিশ্বব্যাপী মধ্যবিত্ত শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত হবে, তার বেশির ভাগই আসবে এশিয়া থেকে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হবে চীন থেকে। এই দেশটি এখনও মধ্যবিত্ত তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে। আগামী ১০ বছরও তাই থাকবে। ২০৩৪ সাল নাগাদ উদীয়মান বাজারভুক্ত দেশগুলোতে প্রতি দুটি মধ্যবিত্ত পরিবারের একটি আসবে চীন থেকে। আর এ ক্ষেত্রে চীনের পরের স্থানটিই হবে ভারতের। অক্সফোর্ড ইকোনমিক্স বলছে, আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভারতের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকার দ্বিগুণেরও বেশি হবে। তবে ঠিক চীনের মতো হতে পারবে না ভারত।

আগামী ১ দশকে সবচেয়ে বেশি মানুষ মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে অন্তর্ভুক্ত হবে চীন থেকে। এই দেশটি এখনও মধ্যবিত্ত তৈরিতে সবচেয়ে এগিয়ে। ছবি: রয়টার্সচীন ও ভারতের বাইরে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবৃদ্ধি সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হবে। আগামী ৫ বছরের মধ্যে ভিয়েতনামে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ব্যাপক বিকাশ দেখা যাবে। ধারণা করা হচ্ছে, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চলে আগামী ৫ বছরের মধ্যে কেবল ভিয়েতনামেই মধ্যবিত্ত শ্রেণির সর্বোচ্চ প্রবৃদ্ধি পরিলক্ষিত হবে।

সব মিলিয়ে, ২০২৯ সালের মধ্যে সারা বিশ্বে প্রতি ৩ জন মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভোক্তাদের মধ্যে ২ জন আসবে এশিয়া থেকে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির সবচেয়ে বেশি প্রসারণ দেখা যাবে চীন, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইনস ও ভিয়েতনামে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, বিশ্বের মধ্যবিত্ত শ্রেণির আকার বাড়াতে তাই এশিয়ার ওপরই অনেকাংশে নির্ভর করতে হচ্ছে। কারণ, মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে উত্তরণের লড়াইয়ে এশিয়ার মানুষেরাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আত্মবিশ্বাসী ও পরিশ্রমী। এ বিষয়ে সম্প্রতি একটি গবেষণা করেছে ম্যাককান ওয়ার্ল্ডগ্রুপ নামের একটি অ্যাডভারটাইজিং এজেন্সি নেটওয়ার্ক। এশিয়ার ১২টি বাজারের ১২ হাজারের বেশি মানুষের ওপর এই গবেষণা চালানো হয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপে অংশ নেওয়া ব্যক্তিদের দুই তৃতীয়াংশ বিশ্বাস করেন, ভালো জীবনমানের জন্য তাদের এশিয়া ছেড়ে অন্যত্র অভিবাসী হওয়ার প্রয়োজন হবে না। অর্থাৎ, তারা মনে করেন যে, তাদের উন্নত জীবনের যে চাহিদা, তা নিজেদের দেশে থেকেই পূরণ করা সম্ভব।

ইন্দোনেশিয়া নিজেদের সরকারি হিসাবেই জানিয়েছে যে, তাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকোচিত হতে শুরু করেছে। এর মূল কারণ করোনা মহামারি। ছবি: রয়টার্সতবে এত আশাবাদের পরও মধ্যবিত্ত শ্রেণি নিয়ে এশিয়ার শঙ্কা কিন্তু যাচ্ছে না। গত বছরের নভেম্বর মাসের শেষের দিকে এশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির ভবিষ্যৎ নিয়ে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করে ব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট। এই নিবন্ধে বলা হয়েছে, এশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবৃদ্ধি প্রায় আটকে গেছে। একসময় যে হারে বাড়ছিল এশিয়া অঞ্চলের মধ্যবিত্তের সংখ্যা, এখন আর সেই হারে বাড়ছে না। বিশেষ করে, ১৯৯১ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এশিয়ায় মধ্যবিত্ত পরিবারের বার্ষিক বৃদ্ধির হার ছিল ৬ শতাংশ। গত ১ দশকে তা নেমে এসেছে ২ শতাংশে। ইকোনমিস্ট ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের সরবরাহ করা পরিসংখ্যান ব্যবহার করে এই হিসাব ও বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

দ্য ইকোনমিস্টের ওই নিবন্ধে আরও বলা হয়েছে, চীনসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণি তুলনামূলকভাবে সংকোচিত হতে শুরু করেছে। এর বার্ষিক বৃদ্ধিতে এক ধরনের স্থবিরতা চলে এসেছে। একমাত্র ভারতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ বা প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়া এরই মধ্যে নিজেদের সরকারি হিসাবেই জানিয়েছে যে, তাদের মধ্যবিত্ত শ্রেণি সংকোচিত হতে শুরু করেছে। এর মূল কারণ করোনা মহামারি। ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এ বিষয়ে মন্তব্য করেছেন এই বলে যে, ‘প্রায় সব দেশেই এমন চিত্র দেখা যাচ্ছে।’

একই ধরনের শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিখ্যাত সংবাদমাধ্যম ব্লুমবার্গের কলামিস্ট কারিশমা ভসওয়ানি। চলতি জানুয়ারি মাসের শুরুর দিকে একটি নিবন্ধ লিখেছেন এশিয়ার রাজনীতি বিষয়ক এই বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেছেন, চীনে পরিবারভিত্তিক সম্পদ ক্ষয় হচ্ছে। কারণ, রিয়েল এস্টেট ইন্ডাস্ট্রিতে ধস নেমেছে। দেশটিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত পরিবারগুলো পড়ে গেছে টানাটানির মধ্যে। অনেকেই নতুন করে বিনিয়োগ করা থেকে সরে যাচ্ছে, সম্পদ বিক্রির ঘটনাও আকছার হচ্ছে। মধ্যবিত্ত শ্রেণির প্রবৃদ্ধির গতি স্লথ হচ্ছে এবং সার্বিক অর্থ ব্যয়ের পরিমাণ কমে যাচ্ছে। ঠিক একই অবস্থা দেখা যাচ্ছে এশিয়ার অন্যান্য দেশেও। ফলে মধ্যবিত্ত শ্রেণির বৃদ্ধির হারে এক ধরনের স্থবিরতা উল্লেখযোগ্যভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে।

প্রতীকী ছবিব্রিটিশ সাময়িকী দ্য ইকোনমিস্ট বলছে, এমন পরিস্থিতিতে এশিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রায় ৭২ শতাংশ জনসংখ্যা বা মধ্যবিত্ত শ্রেণিভুক্ত ২৭০ কোটি মানুষের ভবিষ্যৎ সংকটাপন্ন হয়ে পড়েছে। সেই সঙ্গে এসব দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাও পড়তে পারে হুমকিতে। কারণ, মধ্যবিত্তের উত্থান ও টিকে থাকার ওপর এসব বিষয়ও ব্যাপকভাবে জড়িত।

তবে নানা বিবেচনায় এশিয়ার মধ্যবিত্ত শ্রেণির বিকাশ যদি থমকেও যায়, তাও বিশ্বের সাত মহাদেশের বিচারে বিপুলই থাকবে। আর বিপুলসংখ্যক মধ্যবিত্তের এই বাজার কে না দখল করতে চায়!

লেখক: উপবার্তা সম্পাদক, ডিজিটাল বিভাগ, ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশন

আগামীকাল পড়ুন পঞ্চম পর্ব: বাংলাদেশের মধ্যবিত্ত কেমন আছে?

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যায় বর্তমানে পুরুষের তুলনায় নারীর সংখ্যা বেশি। সেই ২০২২ সাল থেকেই বেশি। একটি দেশের অর্ধেকের বেশি জনগোষ্ঠীকে জোরপূর্বক বিতর্কিত করে, দমন করার চেষ্টা করে, কেবলই পুরুষের যৌনবস্তু...
মাগুরার ৮ বছর বয়সী ছোট্ট শিশু আছিয়াকে ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনায় যখন সারা দেশে আলোড়ন ওঠে, সাধারণ মানুষ যখন ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে, তখন আছিয়ার মরে যাওয়ার দিনে সরকারের প্রভাবশালী উপদেষ্টা বলে দেন, মামলার বিচার...
পয়লা বৈশাখ শুধু একটি দিন বা উৎসব নয়–এটি বাঙালির সাংস্কৃতিক চেতনার এক জীবন্ত প্রতীক। বাংলা নববর্ষের এই দিনটি বাঙালির অসাম্প্রদায়িক ঐতিহ্য, ঐক্য ও সংস্কৃতির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। ইংরেজি নববর্ষের মতো...
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যাই হলো, এ দেশে আদর্শ নায়ক বা ব্যক্তিত্বের অভাব। আমরা যাদের আইডল বানাই, সময়ের ফেরে তারাই এমন রূপ পরিগ্রহ করে যে, শ্রদ্ধার বারোটা বেজে যায় একেবারে। তারা এমন সব কাজ করতে...
হলিউড এনসাইক্লোপেডিয়ায় (বিশ্বকোষ) নতুন মাত্রা যোগ করেছে অস্কারজয়ী নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান এবং বিখ্যাত প্রযোজনা সংস্থা ইউনিভার্সাল পিকচার্সের মার্কেটিং কৌশল।   আগামী বছরের ১৭ জুলাই মুক্তি...
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) আওয়ামীপন্থী তিন কর্মকর্তাকে পুলিশে সোপর্দ করেছে জুলাই বিপ্লব চেতনা বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা। বৃহস্পতিবার দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টরের উপস্থিতিতে তাদের...
'কোনো এক অবসরে পড়ে নিও, আমার সুইসাইড নোট/ জেনে নিও কেন দুঃখরা জমাট বাঁধে, কেন নীল হয়ে যায় ঠোঁট' — এমনই মন খারাপ করা লাইন দিয়ে শুরু হচ্ছে মাহতিম সাকিবের নতুন গান ‘সুইসাইড নোট’।...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.