সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

বৈশ্বিক আবহে আমেরিকা-কানাডা বাণিজ্যযুদ্ধ

আপডেট : ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১৭ এএম

আমেরিকা-কানাডার বাণিজ্যযুদ্ধ পুরোদমে শুরু হয়ে গেছে। এদিকে কানাডায় প্রধানমন্ত্রী বদলের পরই আবার নির্বাচনের ঢাকে কাঠি পড়ে গেছে। বাণিজ্যযুদ্ধের কাড়া-নাকাড়া খুব জোর তালে বাজছে! বিষয়টি কানাডা সরকারের জন্য এতটাই উদ্বেগের যে কানাডার কেন্দ্রিয় ও বিভিন্ন প্রাদেশিক সরকারের পক্ষ থেকে একের পর এক ওয়াশিংটন সফরে লেগেই আছে। ফেডারেল সরকারের দুই মন্ত্রীসহ বেশির ভাগ প্রদেশের প্রিমিয়ার সেখানে ছুটে গেছেন মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী হাওয়ার্ড লুটনিকের সাথে আলোচনার জন্য। সেখানে দীর্ঘ মিটিংয়ের পর সবাই কানাডা ফিরে এসে দাবি করেছেন, খুব ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে। আশা করা যায়, বাণিজ্য যুদ্ধের শেষ হবে। 

তবে এ বিষয়ে অভিজ্ঞরা মন্তব্য করছেন, মিটিং-এ কানাডার জন্য আশাব্যঞ্জক তেমন কিছু ঘটেনি। গত ২৮ মার্চ কানাডার নতুন প্রধানমন্ত্রীও ফোন করেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। তা নিয়ে কানাডার সকল প্রধান প্রধান গণমাধ্যম আনন্দে আটখানা যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার সাথে কোনো অপ্রয়োজনীয় কথা (যেমন ৫১তম রাজ, কানাডার গভর্নর) বলেননি। আর প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজে বলেছেন যে, ভালো কথা হয়েছে। তবে সাথে সংক্ষেপে বলে দিয়েছেন, নির্বাচন করে আসুন। কানাডার মিডিয়া থেকে এ নিয়ে খুব একটা আশাব্যঞ্জক কোনো কথা আসেনি। তাদের মধ্যে ট্যারিফ নিয়ে কোনো কথা হয়নি। নতুন ট্যারিফ তো আসছে।

বাণিজ্যযুদ্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের ৫১তম রাজ্য হওয়ার বিষয়টি কানাডার রাজনীতিকদের কাছে এমন একটি ভয়ংকর অনুভূতি হয়ে দাঁড়িয়েছে। তারা সর্বত্রই আমেরিকান সরকারের প্রতি তাদের উদ্বেগ ও আশঙ্কার কথা পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন। যেমন ১৫ মার্চ মন্ট্রিয়লে অনুষ্ঠিত জি-৭ বৈঠকে পর্যন্ত কানাডার বাণিজ্যমন্ত্রী মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্ক রুবিও-র সামনে কোনো রাখঢাক না করেই জানিয়েছেন যে, কানাডার সার্বভৌমত্বের বিষয়টি কোনো আলোচনার বা বিতর্কের বিষয়বস্তু নয়। লিবারেল দলের প্রধানমন্ত্রী পিয়েরে ট্রুডো পদত্যাগকালে তার শেষ ভাষণে বলতে বাধ্য হয়েছেন যে, কানাডাকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের ৫১তম রাজ্য করার প্রস্তাবটি কোনো হালকা রসিকতার বিষয় নয়। কানাডার জন্য এটি অত্যন্ত গুরুতর একটি বিষয়। 

কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি। ছবি: রয়টার্সলিবারেল দলের নবনির্বাচিত নেতা ও নতুন প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি শপথ নিয়েই আমেরিকার বিরুদ্ধে যুদ্ধংদেহি মনোভাব দেখিয়েছেন। তবে তার প্রকাশ ভঙ্গি বেশ নরম। অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার বলেছেন, আমেরিকা মাথানত না করা পর্যন্ত তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাবেন। অন্টারিও থেকে যুক্তরাষ্ট্রের যে তিনটি অঙ্গরাজ্যে বিদ্যুৎ রপ্তানি হয়ে থাকে, তাতে ২৫% হারে ট্যারিফ আরোপ করা হয়েছে। কানাডার কেন্দ্রিয় সরকার আমেরিকার রপ্তানিতে ডলার টু ডলার ট্যারিফের ঘোষণা করেছে। এসব বিষয় থেকে অনুমান করতে মোটেও কষ্ট হয় না যে, কানাডার সরকার ও রাজনৈতিক মহল প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের ঘোষণায় ঠিক কি পরিমাণে সন্ত্রস্ত বা দিশেহারা! কার যে মাথা নত হবে, তা বোঝার কোনো সুযোগ এখনো আসেনি।

বস্তুত একটি দেশের সার্বিক রপ্তানির ৮০-৯০ শতাংশ যখন একটি মাত্র দেশনির্ভর হয়, তখন সেই দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সে দেশের যেকোনো রাজনৈতিক বা বাণিজ্যিক সিদ্ধান্ত অপর দেশে যে কীরকম অপরিমেয় পরিবর্তন আনতে পারে, আজকের কানাডা তারই একটি উৎকৃষ্ট উদাহরণ। টরন্টোর কাছে কানাডার স্টিল সিটি হ্যামিল্টনের মেয়র এন্ড্রিয়া হারওয়াথ আশঙ্কা প্রকাশ করে জানিয়েছেন, শুল্কযুদ্ধে শুধু এই শহর কর্তৃপক্ষের ক্ষতির পরিমাণ বার্ষিক বিলিয়ন ডলারের অধিক হবে। হ্যামিল্টনের কারখানাগুলো থেকে কানাডার রপ্তানি করা স্টিলের ৮০% জোগান এসে থাকে। এমনকি কানাডার প্রধানমন্ত্রী মার্ক কার্নি পর্যন্ত হ্যামিল্টনের স্টিল নিয়ে আমেরিকার সাথে আলাদা করে আলোচনায় বসতে চান। আমেরিকা-কানাডার ভারি শিল্প-প্রতিষ্ঠানসমূহের একটি বৃহৎ অংশ পরস্পর নির্ভরশীল। এটা দীর্ঘ ২০০ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে। 

দুই দেশের সরকারের উদ্যোগ ও শুল্ক সম্পর্কিত সুবিধাদি মানে সরকারি সহায়তার ফান্ড হাতিয়ে নেওয়া এবং যত কম পারা যায় শুল্ক পরিশোধের সুযোগ গ্রহণের জন্য অনেক বড় বড় কোম্পানি পরিকল্পিতভাবে দুই দেশ নির্ভর প্রতিষ্ঠান তৈরি করেছে। এখন হঠাৎ করে কয়েক মাস বা দুয়েক বছরের মধ্যে সেই নির্ভরশীলতা বদলে ফেলা যাবে, বিষয়টি সেরকম নয়। কানাডার শিল্প-ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশন বা চেম্বারের নেতাদের মতে কানাডায় পনেরো লাখেরও অধিক চাকুরিচ্যুতি হতে পারে। নেমে আসতে পারে গভীর আর্থিক মন্দা। এমনকি শিল্প-কেন্দ্রিক ছোট ছোট শহরের ভবিষ্যৎ অন্ধকার হয়ে যেতে পারে। অনেক শহরেরই রাস্তা-ঘাট-বসতিতে স্থায়ী গঠনগত পরিবর্তন ঘটতে পারে। অর্থাৎ শহরের কোনো কোনো রাস্তাঘাট বা এলাকা স্থায়ীভাবে ব্যবহারের অভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। 

নবনির্বাচিত মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্সআমেরিকা মূলত কানাডার স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যের ওপর ট্যারিফ বা শুল্ক আরোপ করেছে। বলছে, কানাডা যে বিদ্যুৎ রপ্তানি করে তাতেও ওভাল অফিস ২৫% শুল্ক আরোপ করবে। তা শুনে ভয় পেয়ে কানাডার অন্টারিও প্রদেশের প্রিমিয়ার বলেছেন, তারা বিদ্যুতে শুল্ক আরোপ করবে না। ওভাল অফিস থেকে অবশ্য ইঙ্গিত দিয়েছিল, স্টিল ও অ্যালুমিনিয়াম পণ্যে শুল্ক ৫০% করতে পারে। সন্ধ্যার পর অবশ্য প্রেসিডেন্টের মুখপাত্র বলেছেন, আপাতত তারা তা করছে না। চলছে এ রকম পাল্টাপাল্টি বক্তৃতা-বিবৃতি। এমনকি কানাডা যে তার দেশের কৃষক, ডিম, দুধ ও মাংস উৎপাদকদের কম খরচের আমদানি থেকে সংরক্ষণ দিতে এসব পণ্যে উচ্চহারে (কোনো কোনো ক্ষেত্রে ২৫০% পর্যন্ত) শুল্ক আরোপ করে থাকে, তা নিয়েও ওভাল অফিস পাল্টা মন্তব্য করতে ছাড়েনি। স্থানীয় প্রচার মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে, বাণিজ্যযুদ্ধের কারণে কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যাধুনিক এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান কেনার পরিকল্পনা পর্যন্ত স্থগিত করতে চলেছে। কানাডা এ বিষয়ে ইউরোপিয়ান মিত্রদের দিকে ঝুঁকছে। 

কানাডা কেন্দ্রিয় সরকার ট্যারিফ বা শুল্ক তালিকায় আগের ৩০ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের ট্যারিফের সাথে নতুন করে ২৯.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছে। ২৫% শতাংশ হারে এই ২৯.৮ বিলিয়ন ডলারের পণ্যের মধ্যে রয়েছে স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম, যন্ত্রপাতি, কম্পিউটার ও সার্ভার, পানি গরমের যন্ত্র, খেলাধুলা সামগ্রি, ঢালাই লোহার পণ্য। উল্লেখ্য, শীতপ্রধান দেশ হওয়ার কারণে শাক-সবজি থেকে শুরু করে হেন কোনো পণ্য নেই যা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় আসে না। 

কিন্তু সাধারণ মানুষের কাছে এই পরস্পর বিরোধী শুল্কারোপের অর্থ কি! যেমন ধরা যাক, কানাডা আরোপিত রপ্তানিকৃত বিদ্যুতের ওপরও ২৫% শতাংশ শুল্কারোপ হলো। তাহলে আমেরিকার যে তিনটি রাজ্যের মানুষ কানাডার বিদ্যুতের গ্রাহক, তাদের মাসে গড়ে ২৫ ডলারের মত অতিরিক্ত মূল্য পরিশোধ করা লাগবে। সব পণ্যের ক্ষেত্রেই তাই। এই আরোপিত শুল্ক চূড়ান্তভাবে সাধারণ মানুষের পকেট থেকেই যাবে। আবার ধরা যাক, আমেরিকা আরোপিত কানাডিয় স্টিল, অ্যালুমিনিয়াম বা নরম কাঠের ওপর যে শুল্ক তা, চূড়ান্তভাবে আমেরিকার সাধারণ নাগরিকদের পকেট থেকেই যাবে। তাহলে কি ক্লাসিক পুঁজিবাদের যে কেইনসীয় সম্প্রসারণে বলা হয়েছিল, আর্থিক মন্দায় রাষ্ট্র নাগরিকদের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করলে তা শিল্পোদ্যাক্তদেরকেও বাঁচিয়ে রাখতে পারে, যেটাকে পুঁজিবাদের কল্যাণকামী দিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হয়ে থাকে, তা থেকে সরে আসার চেষ্টা? যে প্রকারেই হোক, সাধারণ  মানুষের পকেট কেটেই রাষ্ট্র ও করপোরেট পুঁজিকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা। 

ভিডিও দেখুন:কাজেই যে আমেরিকার নেতৃত্বে পশ্চিমা দেশসমূহ গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার নামে বিশ্বব্যাপী মুক্ত বাণিজ্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী অবাধ পুঁজি চলাচল ও বিনিয়োগকৃত অর্থ ও অর্জিত মুনাফা নির্বিঘ্নে ফেরত আনার ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিল, সেই আমেরিকার চিন্তাতিরিক্ত ভোটে নির্বাচিত ঝানু ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের বিশাল যুদ্ধ, শেষাবধি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে, তা ভাবতে গা শিউরে উঠি। ভেবে এর কিনারা করাও মুশকিল। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত সম্পর্কে শেষ কথা বলা তাঁর খুব কাছের যেমন কোনো মন্ত্রী বা বিভাগীয় প্রধানদের কাছেও দুরূহ, তেমনি দুরূহ তাঁর রাজনৈতিক বিরোধী বা সাধারণ মানুষের কাছেও। কাজেই, তাঁর যে বিভিন্ন বিতর্ক ও অবিতর্কমূলক কার্যক্রমের ক্রমবর্ধমান পরিধি সবাইকে বিশেষভাবে ভাবিত করে তুলেছে, তাঁর নিজের কাছে সে সবের সমাপ্তি না এলে আমাদের কাছে তার উদ্দেশ্য বা বিধেয় সম্পর্কে যেকোনো অনুমান নিতান্তই অবান্তর বলেই মনে হয়। 

এখন দেখা যাক, এই বাণিজ্যযুদ্ধের পেছনে কি আছে কিংবা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্র মূলত কি অর্জন করতে চাইছে। কারণ বিষয়টি যে শুধু কানাডা বা অপরাপর দেশের জন্য ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে তা নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নিজের জন্যও তা যথেষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ। যেমন এই ট্যারিফ চুড়ান্তভাবে সাধারণ জনগণের পকেট কাটবে। আর করপোরেট পুঁজি নিরাপদে থাকবে। অপরদিকে ওভাল অফিস বিশ্বজুড়ে যে বাণিজ্যযুদ্ধ ছড়িয়ে দিচ্ছে তা যেমন একদিকে তাদেরই উদ্যোগে একদা প্রবর্তিত মুক্তবাজার অর্থনীতি এবং উত্তর আমেরিকার তিন দেশ যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও মেক্সিকোর মধ্যে থাকা আরেকটি মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির প্রতিষ্ঠিত ধারাসমূহের বিপরীত। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অভিজ্ঞ ও প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ঘনিষ্ঠ অনেকেই মনে করেন, দৃশ্যমান বাণিজ্যযুদ্ধের শেকড় অনেক গভীরে এবং এটা নিছক কারণহীন বাণিজ্যযুদ্ধ নয়। এটাকে শুধু বাণিজ্যযুদ্ধ হিসেবে দেখলে মারাত্মক ভুল হবে। এটি অনেক বিষয়াবলির একটি সমন্বিত বহিঃপ্রকাশ। কেউ কেউ বিষয়টিকে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের নিজস্ব চিন্তাভাবনা বলে দাগিয়ে দিতে চেষ্টা করছেন, যা আরেকটি ভুল চিন্তা প্রক্রিয়া বলে অনেকে ভাবছেন। 

বিষয়টি নিয়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের প্রথম আমলের একজন দায়িত্বশীল আমলা বলছেন, বর্তমান ওভাল অফিস যে বিদ্যমান 'বিশ্ব শৃংখলা’-কে 'বিশ্ব বিশৃঙ্খলা’ হিসেবে সবকিছুকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, তাতে মনে হয় তিনি সেগুলো আবার যেন তাঁর মন মত করে গুছিয়ে নিতে পারেন। যেমন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইঙ্গিত করেছেন, অনেক দেশ আমেরিকার কাছ থেকে দশকের পর দশক ধারে অন্যায্য সুবিধাদি নিয়ে আসছে। বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কিছুই পাইনি। ন্যাটোতে ইউরোপের প্রতিরক্ষা নিয়ে কিংবা কানাডার উত্তরে অ্যান্টারটিকার প্রতিরক্ষা নিয়ে ইউরোপের দেশসমূহ কিংবা কানাডা কখনোই কোনো কার্যকরি পদক্ষেপ নেয়নি। আমেরিকাই বকলমে সেগুলো করে গিয়েছে। অনেকে বলছেন, আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের মতো তার আর্থিক সক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে এবং অদূর ভবিষ্যতে বিশ্ব অন্য কোনো দেশকে নতুন পরাশক্তি হিসেবে দেখতে পাবে। এই পতন অনুধাবন করেই হয়তো প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প খরচের বাহুল্য ও অপর রাষ্ট্রের জন্য ব্যয় বন্ধ করে দেশ ও দেশের মানুষকে বাঁচাতে চাইছেন। 

আবার অনেকে বলছেন যে, তিনি আসলে করপোরেট পুঁজির স্বার্থ রক্ষায় এসব পদক্ষেপ নিচ্ছেন এবং তাদের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিতেই এই সমস্ত পদক্ষেপ। কোন কোন মহল থেকে বলা হচ্ছে, রিপাবলিকান আমেরিকা খুব সম্ভবত যুদ্ধ অর্থনীতি জোরদার করতে যুদ্ধের ময়দান ইউরোপ/পশ্চিম এশিয়া থেকে সরিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিয়ে যাবে বলে পরিকল্পনা গোছাচ্ছে। যে দেশটি গাঁটের পয়সা খরচা করে সারা পৃথিবীতে ছড়ি ঘোরায়, পৃথিবীর যাবতীয় মেধাবী মস্তিষ্ক কুড়িয়ে আনে, সামরিক ও প্রযুক্তিগত শ্রেষ্ঠত্ব প্রদর্শনের জন্য একের পর এক মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়িয়ে বিভিন্ন দেশে যুদ্ধ লাগিয়ে দেয়–সেই দেশটির আজকের অচেনা আচরণ অনেককেই আর্শ্চযান্বিত করবে, বলাই বাহুল্য। যার ফলশ্রুতিতে কোণঠাসা ডেমোক্র্যাট আমেরিকা বা পৃথিবীর বিভিন্ন বঞ্চিত মহল থেকে এই রিপাবলিকান আমেরিকার বিরুদ্ধে মিথ্যাচার, অপপ্রচার বা কল্পকাহিনি যে হতেই থাকবে, তাতে কোনো ভুল নেই। 

কিন্তু প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কেন এটি করছেন, তিনি কেন 'বিশ্ব শৃঙ্খলা’ কে 'বিশ্ব বিশৃংখলা’-র দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন তা জানতে আমাদের অপেক্ষা করার বিকল্প নেই। আমরা যেটুকু বলতে পারি, তা হলো বর্তমান আমেরিকা যদি এটা বাধ্য হয়ে করে তাহলে এটা আমেরিকার মোড়লিপনার অবসানের লক্ষণ। আর যদি অন্তর্গত অন্য কোনো কারণে করে, তাহলে করপোরেট পুঁজির জগতকে বাঁচাতে পৃথিবীর যুদ্ধ মানচিত্রে আমরা নতুন দৃশ্যপট দেখতে পাব। ইতিমধ্যে, তার কিছু কিছু লক্ষণ দৃশ্যমান হয়েছে। যে করপোরেট জগৎ একসময় পুঁজির ডানা মেলে ধরার জন্য সারা পৃথিবীকে মুক্ত করার ছকে ছিল, সে কেন এখন নিজেকে সেই মুক্ত আকাশ থেকে ঘরের কোণে আটকে রাখতে চাইছে, বিষয়টি যথেষ্ট গোলমেলে নয় কি!  

লেখক: কানাডা প্রবাসী লেখক।

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে বিশ্বমানের করে গড়ে তোলার জন্য প্রচুর বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা বাংলাদেশের এই মুহূর্তে নেই। এখন দেখা দরকার ছিল চুক্তিটা কেমন হয়েছে, আর আদৌ হয়েছে কিনা। যদি নিছক প্রস্তাব আকারে থাকে,...
নেতানিয়াহুর দাবি অনুযায়ী, এই হামলার লক্ষ্য ছিল ইরানের পারমাণবিক সক্ষমতাকে ধ্বংস করা। ইসরায়েলি সেনাবাহিনী ইতোমধ্যে নাতাঞ্জ, ইসফাহান ও ফোরদো পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। যদিও কিছু ক্ষয়ক্ষতি...
প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পর, লেবানন ও সিরিয়াকে ধ্বংস করার পর, বারবার ইরান ও ইয়েমেনে হামলা চালানোর পর এবং পশ্চিমা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণমাধ্যম...
সেরা ও উজ্জ্বল মেধাবীরা আর যুক্তরাষ্ট্রে ভিড় করছে না। তারা নিজ বাড়িতেই থাকছে অথবা অন্য কোথাও যাচ্ছে। এবং এই বিপর্যয় থেকে চীনের চেয়ে লাভবান হওয়ার মতো আর কোনো দেশ নেই। রোবোটিক্স এবং এআই থেকে...
রাজধানীর ডেমরার সাইনবোর্ড এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে ঢালাইয়ের জন্য রড বাঁকা করতে গিয়ে বিদ্যুতায়িত হয়ে রফিকুল ইসলাম ও শফিকুল ইসলাম নামে দুই রড মিস্ত্রির মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে অচেতন...
লোডিং...
পঠিতনির্বাচিত

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.