২০২৪ সালের শেষ প্রান্তে এসে বছরটাকে প্রযুক্তির চোখে দেখলে আমাদের মানসপটে যে ক’জনার ছবি ভেসে ওঠে, তাঁদের মধ্যে ইলন মাস্ক অন্যতম। প্রযুক্তির পাশাপাশি এ বছর রাজনীতির ময়দানও সমান তালে দাপিয়ে বেড়িয়েছেন বিশ্বের শীর্ষ এই ধনী। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের হয়ে প্রচারে নেমে পেয়েছেন অসামান্য সাফল্য। দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়ে ট্রাম্প ইতিমধ্যেই তাঁর সরকারে গুরুদায়িত্ব দিয়েছেন মাস্ককে। তবে থেমে ছিল না নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষকে চমকে দেওয়াও।
তবে রাজনৈতিক সাফল্য তাঁর যতই থাকুক, ইলন মাস্কের আজকের ‘ইলন মাস্ক’ হয়ে ওঠা তো প্রযুক্তি জগতেই। বুদ্ধিদীপ্ত বিনিয়োগ থেকে শুরু করে ভবিষ্যমুখী বিভিন্ন প্রযুক্তি নিয়ে আসা–সব ক্ষেত্রেই সাফল্যের দেবী তাঁকে দুহাত ভরে দিয়েছেন।
বিশ্বজুড়ে মানুষ ইলন মাস্ককে চিনেছে মূলত তাঁর অভাবনীয় ও অভূতপূর্ব সব প্রযুক্তি এবং প্রযুক্তিবিষয়ক অসামান্য সব আইডিয়ার কল্যাণে। এ বছর রাজনীতির ময়দানে ব্যস্ত সময় কাটালেও, প্রযুক্তি জগতে তাঁর সক্রিয়তায় ভাটা পড়েনি এতটুকুও। বেশ কিছু চমকপ্রদ প্রযুক্তি নিয়ে তিনি এ বছরও হাজির হয়েছেন প্রযুক্তিপ্রেমীদের সামনে। মাস্কের উন্মোচিত কয়েকটি প্রযুক্তি সম্পর্কে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
সেলফ-ড্রাইভিং রোবোট্যাক্সি ও রোবোভ্যান
মাস্কের বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাণ প্রতিষ্ঠান টেসলা চলতি বছরের অক্টোবরে উন্মোচন করেছে তাদের বহুল-আলোচিত স্বয়ংচালিত গাড়ি বা সেলফ-ড্রাইভিং কার রোবোট্যাক্সি (রোবট ট্যাক্সি)। গত ১০ অক্টোবর আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ায় ‘উই, রোবট’ নামের এক ইভেন্টে ইলন মাস্ক নিজেই উন্মোচন করেন ‘সাইবারক্যাব’ নামের এই রোবোট্যাক্সিটি। অনুষ্ঠানে বোনাস হিসেবে একটি সেলফ-ড্রাইভিং রোবোভ্যানও (রোবট ভ্যান) সামনে নিয়ে আসেন টেসলার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাস্ক।
‘সাইবারক্যাব’ রোবোট্যাক্সি ও রোবোভ্যান দুটোই ফুল অটোনোমাস বা পূর্ণাঙ্গ স্ব-চালিত যান হিসেবেই বাজারে আসবে বলে জানিয়েছেন তিনি। উন্মোচন অনুষ্ঠানে টেসলার এই বৈদ্যুতিক গাড়ি দুটি সম্পর্কে আরও কিছু চমকপ্রদ তথ্য শেয়ার করেছেন মাস্ক।
প্রথমত ফুল অটোনোমাস বা পূর্ণাঙ্গ স্ব-চালিত হওয়ায় দুটোর কোনোটিতেই চালকের প্রয়োজন পড়বে না। ফলে থাকছে না কোনো স্টিয়ারিং হুইল বা প্যাডেল। তবে সাইবারক্যাবে থাকবে গাল-উইং বা ফলক্যান-উইং দরজা, যেমনটা টেসলা’র মডেল এক্স গাড়িগুলোতে দেখা যায়। মাস্কের দাবি অনুযায়ী, সাধারণ গাড়ির তুলনায় স্ব-চালিত বা স্বনিয়ন্ত্রিত যান (অটোনোমাস ভেহিকল) ১০ গুণ বেশি নিরাপদ। এ ছাড়া মানুষের তুলনায় এআই প্রযুক্তির এই গাড়ি ৫ থেকে ১০ গুণ বেশি সময় চালাতে সক্ষম।
মাস্ক বলেন, ‘আমরা এখন মানব নির্দেশিত (সুপারভাইজড) পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংচালিত গাড়ি থেকে মানব নির্দেশনা ব্যতীত (আনসুপারভাইজড) পূর্ণাঙ্গ স্বয়ংচালিত গাড়ির দিকে এগোচ্ছি, যেখানে আপনি গাড়িতে ঘুমিয়ে পড়বেন এবং গন্তব্যে পৌঁছনোর পর জেগে উঠবেন।’
এ ছাড়া খরচের দিক থেকেও সাইবারক্যাব অনেক বেশি সাশ্রয়ী হবে বলেই জানিয়েছেন মাস্ক। শহরে একটি বাস চালাতে মাইলপ্রতি খরচ হয় যেখানে ১ ডলার, সেখানে সাইবারক্যাবের খরচ পর্যায়ক্রমে নেমে আসতে পারে পাঁচ ভাগের এক ভাগে, অর্থাৎ মাত্র ২০ সেন্টে। পাশাপাশি এতে ‘ইনডাকটিভ চার্জিং’ সুবিধা থাকায় ইনডাকটিভ চার্জারের ওপর দাঁড়ালেই গাড়িটি চার্জ হতে শুরু করবে। এ ছাড়া সাইবারক্যাবকে নিজেদের মতো করে কাস্টমাইজ করে নেওয়ারও সুযোগ পাবেন ব্যবহারকারীরা।
এদিকে রোবোভ্যান সম্পর্কে আলাদা করে বিস্তারিত কিছু জানাননি ইলন মাস্ক। শুধু জানা গেছে, ২০ জন যাত্রী ধারণ ক্ষমতার এই গাড়িতে সাইবারক্যাবের উন্নত সব ফিচারই থাকবে।
সাইবারক্যাব নিয়ে মাস্কের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা হচ্ছে ভবিষ্যতে তিনি টেসলা ট্যাক্সির একটি প্যাসেঞ্জার সার্ভিস শুরু করতে চান, যেখানে সবগুলো বৈদ্যুতিক গাড়িই হবে পূর্ণাঙ্গ স্ব-চালিত যান বা সেলফ-ড্রাইভিং কার। যাত্রীরা অ্যাপের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে ট্যাক্সি ব্যবহার করবেন। পাশাপাশি গাড়ির মালিকেরা চাইলে টেসলার এই সার্ভিসে নিজেদের গাড়িকে ভাড়ায় চালাতে দিতে পারবেন। ফলে বাড়তি উপার্জনেরও সুবিধা থাকবে ব্যবহারকারীদের।
উন্মোচন অনুষ্ঠানে দুটোরই প্রোটোটাইপ বা প্রাথমিক মডেল প্রদর্শিত হয়েছে এবং এদের বাণিজ্যিক উৎপাদন ২০২৬ সাল নাগাদ শুরু হতে পারে বলে জানিয়েছেন মাস্ক। এ ছাড়া সাইবারক্যাব রোবোট্যাক্সির দাম ৩০ হাজার ডলারের নিচে রাখার আশা ব্যক্ত করেছেন তিনি।
রোবট ‘অপটিমাস’
মাস্কের উন্মোচিত বছরের আরেকটি আলোচিত প্রযুক্তি পণ্য হচ্ছে মানবাকৃতির (হিউম্যানয়েড) রোবট ‘অপটিমাস’। গত ১০ অক্টোবর ‘উই, রোবট’ অনুষ্ঠানে রোবোট্যাক্সি ও রোবোভ্যান উন্মোচনের পাশাপাশি অপটিমাস রোবটের উন্নত একটি প্রোটোটাইপকেও সকলের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন ইলন মাস্ক। কোনো সন্দেহ নেই এটি বছরের সবচেয়ে আলোচিত হিউম্যানয়েড বা মানবাকৃতির রোবটগুলোর একটি। অবশ্য অপটিমাস রোবটের একেবারে প্রথম প্রোটোটাইপটি টেসলা ২০২২ সালেই উন্মোচন করেছে।
কী কী করতে সক্ষম এই ‘অপটিমাস’ রোবট? প্রথমত ঠিক মানুষের মতোই হাঁটাচলা ও ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজে কথা বলতে পারে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা এআই প্রযুক্তির এই রোবট। এ ছাড়া বাসাবাড়িতে মানুষের হেল্পিং হ্যান্ড হিসেবে বিভিন্ন কাজ করার পাশাপাশি এটি কারখানাতেও কাজ করতে সক্ষম। চলতি বছরের জুনে মাস্ক জানিয়েছেন, আগামী বছর (২০২৫ সাল) থেকে অপটিমাস রোবটের ১ হাজার ইউনিট কারখানাতেও কাজ শুরু করবে।
মাস্ক জানান, ‘কারখানায় রোবটের ব্যবহার বৈপ্লবিক পরিবর্তন আনতে সক্ষম। ভবিষ্যৎ বাজারে বার্ষিক ১০০ কোটি হিউম্যানয়েড রোবটের চাহিদা তৈরি হবে। এ বাজারের কমপক্ষে ১০ শতাংশ রোবট টেসলা সরবরাহ করতে পারবে। টেসলা প্রতিটি অপটিমাস রোবট ১০ হাজার ডলারে নির্মাণ করে ২০ হাজার ডলারে বিক্রি করতে পারবে।’
অপটিমাস রোবটটির উন্নয়নের কাজ বেশ জোরেশোরেই চলছে। গত আগস্টে টেসলা এই রোবটের প্রশিক্ষণের জন্য রীতিমতো বিজ্ঞপ্তি দিয়ে লোক নিয়োগ দিয়েছে। চলতি মাসেই অপটিমাসকে উঁচুনিচু পথে হাঁটার পরীক্ষা দিতেও দেখা গেছে, যার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। ভিডিওতে দেখা যায়, হাঁটার একপর্যায়ে ঢালু পথ ধরে নামতে গিয়ে একবার হোঁচট খেয়েও নিজেকে সামলে নিতে পেরেছে অপটিমাস।
মাস্ক আরও জানিয়েছেন, ২০২৬ সালে অপটিমাস রোবটে বেশ কিছু পরিবর্তন আন হবে। বিশেষ করে এর সফটওয়্যার কাস্টমাইজ করা যাবে। ফলে প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন কাজ করানো যাবে অপটিমাসকে দিয়ে। আর তখন অপটিমাসের ‘অপটিমাম লেভেল’ যে কোথায় পৌঁছবে, সেটা ভেবেই আপাতত রোমাঞ্চিত হতে পারেন রোবটপ্রেমীর!
উৎক্ষেপণ প্যাডে নিরাপদ অবতরণ
মহাকাশযান প্রযুক্তির এক যুগান্তকারী ঘটনার সাক্ষী হয়েছে ২০২৪। সেটাও ইলন মাস্কের মহাকাশযান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স-এর কল্যাণে। গত ১৩ অক্টোবর স্পেসএক্স তাদের স্টারশিপ রকেটটিকে উৎক্ষেপণের পর এর সুপার হেভি বুস্টারটিকে (প্রথম স্টেজ) উৎক্ষেপণ প্যাডেই নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হয়। বুস্টারকে বারবার ব্যবহার (রিইউজেবল) করার ক্ষেত্রে এটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ এক সাফল্য।
পঞ্চমবারের চেষ্টায় এই সফলতা পেল স্পেসএক্স। এর আগের চারবার বুস্টারটি উৎক্ষেপণ প্যাড থেকে দূরে অবতরণ করাতে হয়েছে। উল্লেখ্য, স্পেসএক্স-এর স্টারশিপ রকেটের দুটি অংশ। প্রথম স্টেজ হচ্ছে বুস্টার। আর দ্বিতীয় স্টেজ হচ্ছে হচ্ছে স্টারশিপ মহাকাশযান।
অক্টোবরে টেক্সাসের বোকাচিকা মহাকাশ কেন্দ্র থেকে উৎক্ষেপণের কিছু সময় পর বুস্টারটি স্টারশিপ মহাকাশযান থেকে আলাদা হয়ে নিচে অবতরণ করতে শুরু করে। উৎক্ষেপণ প্যাডের কাছাকাছি এসে বুস্টারটির গতি ধীর হয়ে আসে এবং এটি নিজে থেকেই সহজ, সাবলীলভাবে উৎক্ষেপণ প্যাডে চলে আসে। এরপর উৎক্ষেপণ প্যাডের বিশাল দুটি যান্ত্রিক (মেকানিক্যাল) হাত বুস্টারটিকে ধরে ফেলে। ব্যস, মহাকাশ গবেষণার ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনার সাক্ষী হয় পুরো বিশ্ব।
বিশ্বের প্রথম বাণিজ্যিক স্পেসওয়াক
ইলন মাস্কের স্পেসএক্স আরেকটি অনন্য নজির স্থাপন করেছে ২০২৪ সালে। মহাকাশ অভিযানের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বাণিজ্যিক স্পেসওয়াক মিশন ‘পোলারিস ডন’ পরিচালনা করেছে তারা। এই বেসরকারি মহাকাশ অভিযানে অংশ নিয়েছেন জারেড আইজ্যাকম্যান, আনা মেনন, সারাহ গিলিস ও স্কট ‘কিড’ পতিত। ‘রেজিলিয়েন্স’ নামক ক্রু ড্রাগন মহাকাশযান ব্যবহার করা হয়েছে এই মহাকাশ অভিযানে।
গত ১২ সেপ্টেম্বর জারেড আইজ্যাকম্যান ও সারাহ গিলিস মহাকাশযান থেকে বের হয়ে বিশ্বের প্রথম এই বাণিজ্যিক স্পেসওয়াক সম্পন্ন করেন। স্পেসস্যুট পরে তাঁরা বেশ কয়েকটি মোবিলিটি টেস্টেও অংশ নিয়েছেন। এ ছাড়া পোলারিস ডন অভিযানে অংশ নিয়ে আনা মেনন ও সারাহ গিলিস নারীদের মধ্যে পৃথিবী থেকে সবচেয়ে দূরবর্তী স্থানে ভ্রমণের রেকর্ড গড়েছেন।
এবারের এই বাণিজ্যিক মহাকাশ অভিযানে ‘রেজিলিয়েন্স’ মহাকাশযানটি সর্বোচ্চ ৮৭০ মাইল উচ্চতায় পৌঁছয়। উল্লেখ্য, ১৯৭২ সালে নাসার পরিচালিত অ্যাপলো প্রোগ্রামের পর মহাকাশে এতটা উচ্চতায় আর ওঠেনি মানুষ। মানুষের মহাকাশ অভিযানের স্পৃহাকে আসলেই এক অনন্য উচ্চতায় তুলতে সক্ষম হয়েছে ‘পোলারিস ডন’।
মানব মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন
২০২৪ সালের একেবারে শুরুতে প্রযুক্তির উৎকর্ষের চমৎকার এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করে ইলন মাস্কের ব্যতিক্রমধর্মী প্রতিষ্ঠান নিউরালিংক। গত জানুয়ারিতে বিশ্বে প্রথমবারের মতো মানব মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করতে সমর্থ হয় প্রতিষ্ঠানটি। এর আগে শূকর ও বানরের মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে সফল হয়েছে নিউরালিংক।
শুনতে কাল্পনিক মনে হলেও নিউরালিংকের চিপ মস্তিষ্কে স্থাপন করে মস্তিষ্ক দিয়েই বিভিন্ন যন্ত্র বা ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অর্থাৎ, এই চিপের সাহায্যে মানুষ শুধু নিজের ভাবনা দিয়েই বিভিন্ন ডিভাইস নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশ্বাস না হয় তো নোল্যান্ড অরবাঘকেই জিজ্ঞেস করে দেখুন। গাড়ি দুর্ঘটনায় পক্ষাঘাতগ্রস্ত আমেরিকার অধিবাসী নোল্যান্ড অরবাঘ নিজে নড়াচড়া করতে পারেন না। কিন্তু গত জানুয়ারিতে মস্তিষ্কে নিউরালিংকের তারহীন (ওয়্যারলেস) চিপ স্থাপনের পর থেকে তিনি মস্তিষ্ক দিয়েই ল্যাপটপের কার্সর নিয়ন্ত্রণ করা থেকে শুরু করে ল্যাপটপে দাবা ও সিভিলাইজেশনের মতো বিভিন্ন গেম খেলতে পারছেন।
মস্তিষ্কে সফলভাবে চিপ স্থাপন প্রসঙ্গে এক্স প্ল্যাটফর্মে স্ট্রিম হওয়া এক ভিডিওতে অরবাঘ বলেন, ‘চিপ স্থাপনের অস্ত্রোপচারটি অত্যন্ত সহজ ছিল। একদিন পরই হাসপাতাল থেকে মুক্তি পেয়েছিলাম। আমার কোনো ধরনের প্রতিবন্ধকতা নেই।’ নিজের এক্স অ্যাকাউন্ট থেকে মাস্ক বলেন, ‘আমাদের এই যন্ত্রের নাম হবে টেলিপ্যাথি।’
নিউরালিংকের চিপ হচ্ছে এক প্রকার ব্রেন কম্পিউটার ইন্টারফেস বা বিসিআই। এটি মানুষের মস্তিষ্কের তরঙ্গ শনাক্ত করে এর অর্থ ডিকোড বা পাঠোদ্ধার করতে পারে। উল্লেখ্য, এই চিপটি মানব মস্তিষ্কের সাথে তারযুক্ত ইলেকট্রোড ব্যবহার করে থাকে। এই ইলেকট্রোডগুলোই মস্তিষ্কের কোষ থেকে সংকেত গ্রহণ করে এবং সেগুলোকে ব্লুটুথের মাধ্যমে নির্দিষ্ট ডিভাইসে বা যন্ত্রে প্রেরণ করে।
সহজ করে বললে, মস্তিষ্কে স্থাপন করা সফটওয়্যার চিপটি মস্তিষ্কের নিউরন হতে প্রাপ্ত সিগন্যাল ভাষান্তর করবে। এবার এই ভাষান্তরিত সিগন্যালগুলোই ব্যক্তির কমান্ড হিসেবে কাজ করবে। অর্থাৎ, চিপটির ব্যবহারকারী তাঁর নিজের চিন্তা বা ভাবনার মাধ্যমেই অতি-বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন একটি কম্পিউটারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে।
নিউরালিংক বলছে, মস্তিষ্কে এই ব্রেইন কম্পিউটার ইন্টারফেস চিপ স্থাপন করে শারীরিক প্রতিবন্ধী ব্যক্তিরা স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারবে। উল্লেখ্য, গত আগস্টে অ্যালেক্স নামের আরেকজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়েছে এই চিপ। এখন তিনি মস্তিষ্ক দিয়েই থ্রিডি ডিজাইন করতে পারছেন এবং আগের চেয়ে আরও ভালোভাবে ফার্স্ট পারসন শুটার গেম খেলতে পারছেন।
এরই মধ্যে এক হাজারেরও বেশি মানুষ তাদের মস্তিষ্কে এই চিপ স্থাপনের আগ্রহ প্রকাশ করেছে বলে নিউরালিংক জানিয়েছে। আমেরিকায় দুজন ব্যক্তির মস্তিষ্কে চিপ স্থাপনের পর এবার কানাডাতে মানব মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করতে চলেছে নিউরালিংক। গত মাসে (নভেম্বরে) কানাডার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এ সম্পর্কিত অনুমতিও পেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
গ্রোক এআই চ্যাটবটের টেক্সট টু ইমেজ মডেল
ইলন মাস্কের স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠান এক্সএআই গত আগস্টে তাদের এআই চ্যাটবট গ্রোকের উন্নত সংস্করণ ‘গ্রোক-২’ রিলিজ করেছে। গ্রোক-২ এর মূল আকর্ষণ হচ্ছে এর টেক্সট-টু-ইমেজ সক্ষমতা। ব্যবহারকারীর প্রম্পটের ওপর ভিত্তি করে একেবার ফটোরিয়ালিস্টিক সব ইমেজ বা ছবি জেনারেট করতে সক্ষম এই চ্যাটবটটি। মাস্ক মহাশয় এই চ্যাটবটটিতে কোনো প্রকার ফিল্টারের বালাই রাখেননি। ফলে ওপেনএআই’র চ্যাটজিপিটি বা গুগলের জেমিনি’তে যেসকল প্রম্পট দিয়ে ইমেজ জেনারেট করা যায় না, সেটাও অনায়াসে করা যায় গ্রোক-২ চ্যাটবটে। এমনকি সেলিব্রেটি বা বিখ্যাত ব্যক্তিদের ছবি জেনারেট করার ক্ষেত্রেও গ্রোক-২ কোনো ফিল্টার করে না। এ জন্য অবশ্য যথেষ্ট সমালোচনারও সম্মুখীন হতে হয়েছে প্ল্যাটফর্মটিকে।
মাস্ক কিছুদিন আগে তাঁর এক্স (পূর্বের টুইটার) প্ল্যাটফর্মের ব্যবহারকারীদেরকে তাঁদের মেডিকেল ডেটা গ্রোক চ্যাটবটে আপলোড করতে বলেছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রশিক্ষণ দেওয়ার মাধ্যমে চ্যাটবটটিকে মেডিকেল ডেটা বিশ্লেষণে আরও সক্ষম করে তোলা। উল্লেখ্য, গত ৯ ডিসেম্বর এক্সএআই ‘অরোরা’ নামের নতুন একটি টেক্সট-টু-ইমেজ এআই মডেল যুক্ত করেছে গ্রোক-২ চ্যাটবটে। পাশাপাশি গ্রোক-২ চ্যাটবটিকে সম্প্রতি এক্স প্ল্যাটফর্মের নন-পেইড ব্যবহারকারীদের জন্যও উন্মুক্ত করে দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।