সর্বশেষ চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে ইংল্যান্ডের ভরাডুবির পর পদত্যাগ করেন সাদা দলের অধিনায়ক জস বাটলার। এরপর থেকেই আলোচনা চলতে থাকে, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে ইংলিশদের নেতৃত্ব দেবেন কে? টি-টোয়েন্টিতে অধিনায়ক হিসেবে হ্যারি ব্রুককে পাওয়া প্রায় নিশ্চিত হলেও গত মাসের শুরুতে ইংল্যান্ডের ক্রিকেট বোর্ডের (ইসিবি) এক পরিচালক রব কি টেস্ট অধিনায়ক বেন স্টোকসের দায়িত্ব বাড়িয়ে সাদা দলের অধিনায়ক করার পরামর্শও দেন।
সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক এউইন মরগ্যানও সম্প্রতি স্টোকসকে অধিনায়ক করার পক্ষে মত দিয়েছেন। তবে দেশটির আরেক সাবেক ক্রিকেটার মাইকেল ভন দাবি করেছেন, স্টোকসকে সাদা বলে অধিনায়ক বানানোর সিদ্ধান্ত হবে ‘অযৌক্তিক’ ও ‘স্বার্থপর।’
সম্প্রতি ইংলিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফ রিপোর্ট করেছে, ইংল্যান্ডের টি-টোয়েন্টি সংস্করণের নেতৃত্বভার উঠতে যাচ্ছে ব্রুকের হাতে। আর ওয়ানডে সংস্করণ নিয়ে কোনো সিদ্ধান্ত পৌঁছাতে পারেনি ইসিবি। এক্ষেত্রে ব্রুক ও স্টোকসের মধ্যে কাউকে বেছে নেওয়ার কথা ভাবছে দেশটির ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা, এমনটাই জানায় টেলিগ্রাফ।
তবে স্টোকসকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হতে পারে তাঁর চোটশঙ্কা- এমনটা উঠে এসেছে আরেক ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিসিবির প্রতিবেদনে। বর্তমানে হ্যামস্ট্রিংয়ের সার্জারির পরবর্তী পুনর্বাসনে আছেন স্টোকস। ২০২৩ সাল থেকে ওয়ানডে ক্রিকেটে দেখা যায়নি ৩৩ বছর বয়সী এ অলরাউন্ডারকে।
এই অবস্থায় ওয়ানডেতে প্রত্যাবর্তন স্টোকসের ওয়ার্কলোড বাড়িয়ে দেবে বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন ভন। সাবেক ইংলিশ অধিনায়কের মতে, চলতি বছরটা স্টোকসের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। কারণ স্টোকসের নেতৃত্বেই ঘরের মাঠে ভারতের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলবে ইংল্যান্ড। এরপর খেলতে হবে অ্যাশেজও।
স্টোকসকে ওয়ানডের অধিনায়ক করে ফেরানোর নিয়ে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাঙ্গনে পক্ষে-বিতর্কে নানান কথা হচ্ছে। এমন সময় তোপ দেগেছেন মাইকেল ভন। সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক বলেছেন, ‘এটা পুরোপুরি অযৌক্তিক ভাবনা যে, বেন স্টোকস আবার সাদা বলের ক্রিকেট খেলতে যাচ্ছেন।’
নিজের মন্তব্যের ব্যাখ্যায় ভন বলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের হয়ে শুধু খেলতে নামলেই নয়, অনুশীলনেও ও নিজের সবটা উজাড় করে দেয়। একদিক থেকে চিন্তা করলে, আমার মনে হয় (ওয়ানডে অধিনায়ক হিসেবে) ওকে বিবেচনা করলে এটা কিছুটা ‘স্বার্থপর’ সিদ্ধান্ত হবে। কারণ ও বেন স্টোকস, ও ‘হ্যাঁ’-ই বলবে। ইংল্যান্ড ওকে যা-ই করতে বলবে, ও সেটাই করবে। (ফিরতে রাজি হবে কি না) ওকে জিজ্ঞেস করারই দরকার নেই। ওকে ওর মতো থাকতে দিন।’
এর আগে ২০২২ সালে ইংল্যান্ডের টেস্ট দলের অধিনায়ক হিসেবে দায়িত্ব পান স্টোকস। এরপর ব্রেন্ডন ম্যাককালামের অধীনে স্টোকসের নেতৃত্বাধীন ইংল্যান্ড লাল বলের ক্রিকেটে ভিন্ন মাত্রা যোগ করেছে। সে কারণেই কিনা সাদা বলের ক্রিকেট থেকে বাটলারের পদত্যাগের পর ইসিবি পরিচালক রব বি জানান, সাদা বলের জন্যও অধিনায়ক হিসেবে স্টোকসকে বিবেচনা না করা হবে ‘বোকামি।’
কিন্তু বাড়তি দায়িত্বের কারণে অ্যাশেজ পুনরূদ্ধারের মিশনে কোনো কারণে স্টোকসকে না পাওয়া গেলে সেটার চারম মূল্য দিতে হবে ইংল্যান্ডকে, এমনটাই মনে করেন ভন। তাই স্টোকসকে সাদা বলে ফিরিয়ে ঝুঁকি নেওয়ার পক্ষে নন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক। এ প্রসঙ্গে ভন বলেছেন, ‘ওর হাতে অ্যাশেজের মুকুটটা পুনরায় দেখতে দিন।’
ভন যোগ করেছেন, ‘এটা শুধু এবারের ভারত সিরিজ বা অ্যাশেজের ব্যাপার নয়। আমি ওকে ২০২৭ সালের হোম অ্যাশেজেও দলের নেতৃত্বে দেখতে চাই। আমি চাই, ও ইংল্যান্ডকে একটি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে নিয়ে যাবে।’
আর এ চাওয়া পূরণেই স্টোকসের ওপর বাড়তি দায়িত্ব চাপানোর পক্ষে নন ভন, ‘ওর ওপর সাদা-বলের বোঝা কেন চাপিয়ে দেওয়া হবে? এটা শুধু চাপের বিষয় নয়। কারণ ও অন্যদের চেয়ে বেশি চাপ নিতে পারে। কিন্তু ওকে ওর শরীরের খেয়াল রাখতে দিন। এবং যত বেশি সম্ভব, ওকে টেস্ট খেলতে দিন।’
পরিবর্তে হ্যারি ব্রুককেই টি-টোয়েন্টির পাশাপাশি ওয়ানডের অধিনায়ক করার পরামর্শও দিয়েছেন ভন, ‘হ্যারি ব্রুক টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক হতে যাচ্ছেন। আশা করছি, দ্রুতই এটা ঘোষণা করা হবে। পরবর্তী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এক বছরের মধ্যে। ওই টুর্নামেন্টের জন্য যদি ব্রুক এই সংস্করণে অধিনায়ক হিসেবে যথেষ্ট ভালো হয়, তাহলে ৫০ ওভারের অধিনায়ক হিসেবে ২০২৭ বিশ্বকাপের জন্য ও কি যথেষ্ট ভালো নয়?’