৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ নিয়ে বেশ বড়সড় ঝামেলাতেই পড়েছে মার্কিন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান বোয়িং। গ্রাউন্ডেড করার পরামর্শ, বিভিন্ন ত্রুটি বেরিয়ে আসা থেকে শুরু করে মার্কিন প্রশাসনের তদন্তের মুখেও পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এর মধ্যেই মহাকাশযাত্রার পরিকল্পনা করেছে তারা। আর তাতেই প্রথম দফায় ব্যর্থ হয়েছে বোয়িং।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি বলছে, গতকাল সোমবার ক্রু নিয়ে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) যাওয়ার কথা ছিল বোয়িংয়ের একটি মহাকাশযানের। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বলছে, উড্ডয়নের দুই ঘণ্টা আগে বাতিল করা হয় ওই মহাকাশযাত্রা। নিরাপত্তার কারণেই এটি বাতিল করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
সোমবার ফ্লোরিডার ক্যাপ ক্যানাভেরাল থেকে যাত্রা করার কথা ছিল বোয়িংয়ের স্টারলাইনারের। তাতে বসা ছিলেন দুই মহাকাশচারী বুচ উইলমোর ও সুনি উইলিয়ামস। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত কারণে বাতিল করা হয় যাত্রা। বলা হয়, অক্সিজেনের যন্ত্রে সাময়িক সমস্যা দেখা দিয়েছে। আজ মঙ্গলবার রাতে নতুন করে চেষ্টা করা হবে।
মহাকাশে মানুষবাহী যান পাঠানোর পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই করছে বোয়িং। কিন্তু মহাকাশযান বানাতে দেরি হওয়ায় এ কার্যক্রম বছরের পর বছর পিছিয়ে দেওয়া হয়। এবার বাতিলের ব্যাপারে নাসার প্রধান বিল নেলসন বলেন, ‘নাসা সরার আগে নিরাপত্তার ওপর জোর দেয়। আমরা প্রস্তুত হলেই কেবল যাব।’
এই অভিযান সফল হলে ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পর বোয়িং হবে দ্বিতীয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, যারা আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (আইএসএস) মানুষবাহী মহাকাশযান পাঠাচ্ছে। এর আগে ২০২০ সালে ড্রাগন ক্যাপসুলের মাধ্যমে প্রথম হওয়ার তকমা পায় স্পেসএক্স।
এদিকে, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজ নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মার্কিন সংস্থা দ্য ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ)। এর আগে উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানটি এফএএকে জানায়, ৭৮৭ ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের পর্যবেক্ষণ ঠিকঠাকমতো হয়নি। এরপরই এই তদন্ত শুরুর ঘোষণা দিল উড়োজাহাজ পর্যবেক্ষণ সংস্থাটি। এফএএ বলছে, পর্যবেক্ষণের সময় সংশ্লিষ্টরা কোনো ভুল করেছেন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হবে।
গত জানুয়ারিতে আলাস্কায় ফ্লাইট চলাকালীন বোয়িংয়ের ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের একটি উড়োজাহাজের দরজায় বিস্ফোরণ হয়। এ ঘটনার পর বোয়িংয়ের নিরাপত্তার মান নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা। ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) এ ঘটনায় তদন্ত শুরু করে।
নিরাপত্তা ত্রুটি বুঝতে পেরেই বোয়িং কোম্পানি ড্রিমলাইনার উড়োজাহাজের উৎপাদন কমিয়েছে বলে ধারণা করছেন অ্যাভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা। এ ব্যাপারটিও আমলে নিয়েছে এফএএ। এই ত্রুটি প্রমাণিত হলে, বিশ্বজুড়ে ১১ শর বেশি ড্রিমলাইনার না ওড়ানোর সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলেও আশঙ্কা করছেন তাঁরা।
সম্প্রতি ৭৮৭ ড্রিমলাইনারের কারিগরি ত্রুটির কথা সামনে এনে আলোচিত হয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রকৌশলী স্যাম সালেহপর। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য টেলিগ্রাফের কাছে তিনি দাবি করেছেন, ‘উৎপাদন বাড়াতে গিয়ে উড়োজাহাজগুলোর অনেক ক্রটিকে পাত্তা দেওয়া হয়নি।’