যে কোনো আন্তঃসম্পর্ক বজায় রাখার জন্য উভয় পক্ষকেই দায়িত্ব নিতে হয়। এক্ষেত্রে একজন গলা পানিতে নামলে অন্তত অপরজনকে হাঁটু পানিতে নামতেই হবে। একজন শুধুই বদলাতে থাকবেন, আর আরেকজন কিছুই করবেন না—এটা কিন্তু সম্পর্কের জন্য অশনিসংকেত।
কারণ অভিমান, অনুযোগ, অভিযোগ, দোষারোপ—সবই যদি একজনের নামে জমা রাখি এবং আশা করতে থাকি সে–ই বদলাবে—তাহলে এই সম্পর্কের পরিণতি দিনে দিনে খারাপের দিকেই যাবে। রবীন্দ্রনাথকে ধার করে বলি, ‘লোকে ভুলে যায় দাম্পত্যটা একটা আর্ট, প্রতিদিন ওকে নতুন করে সৃষ্টি করা চাই।’
আন্তঃসম্পর্কের বিরোধ সমাধানে সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, পরস্পরকে সময় দেওয়া। স্বচ্ছভাবে নিজের অনুভূতিগুলো উপস্থাপন করা প্রয়োজন। যেমন: ‘তুমি সেদিন যে কথাটা বলেছিলে সেটা শুনে আমি খুব দুঃখ পেয়েছিলাম’, অথবা ‘তুমি সেদিন যে আচরণটা করেছিলে সেটা দেখে আমি ভয় পেয়েছিলাম’, কিংবা ‘তোমার ওই দিনকার কাজগুলো দেখে আমার ভীষণ রাগ হয়েছে’।
সঙ্গীর নির্দিষ্ট আচরণ অথবা শব্দ প্রয়োগকে চিহ্নিত করে বলুন, সেটা আপনার মধ্যে ভয় তৈরি করছে নাকি রাগ তৈরি করছে নাকি দুঃখ তৈরি করছে নাকি আনন্দ তৈরি করছে। জেনারালাইজ করে ‘তোমার চোখটাই খারাপ’, অথবা ‘আমি বলেই তোমার সঙ্গে সংসার করছি’—এই কথাগুলো সমস্যাকে দীর্ঘায়িত করে।
যতদিন আমরা সঙ্গীর সঙ্গে সম্পর্কের ট্রান্সপারেন্সি বা স্বচ্ছতার জায়গাটা নিশ্চিত করতে পারব না, ততদিন এই সম্পর্ক আমাদের মধ্য থেকে মানসিক শক্তির ক্ষয় ঘটবে। সেখানে দুটো মানুষ দুটো বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো একই ছাদের তলায় থাকবে। মাঝখানে কোনো সংযোগ সেতু থাকবে না, যোগাযোগের ভাষা থাকবে না। তাঁরা কথা বলেন, কিন্তু মন খুলে কথা বলেন না। এভাবেই আন্তঃসম্পর্কগুলো একদিন মারা যায়।
নির্মলেন্দু গুণের কবিতা থেকে বলা যায়,
‘একদিন কোথাও যাব না, শূন্যস্থানে তুমি
কিংবা অন্য কেউ বসে থেকে বাড়াবে বয়স।
একদিন তোমাকে শাসন করা অসম্ভব ভেবে
পূর্ণিমার রাত্রে মরে যাব।’
একটা জিনিস মনে রাখা ভালো, জীবনসঙ্গীর কাছে আমার চাহিদা কী, সেটা যেমন আমার স্পষ্ট বোঝা দরকার, ঠিক তেমনি আমি তাকে কী দিচ্ছি, সেটাও আমাকে বুঝে নিতে হবে। সবকিছুর একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে। কখন সীমানা অতিক্রম হবে? কীভাবে বুঝব সীমানা অতিক্রম হয়েছে? সীমা অতিক্রম হলে আমি কী করবো? কখন আমি এই সম্পর্ক ভেঙে দেব? কতদিন আমি সম্পর্কটি রাখব? সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য আমি নিজের জীবন থেকে কী কী বাদ দিতে পারি এবং কী কী বাদ দিতে পারি না—এই বিষয়গুলো সম্পর্কে জড়ানোর আগেই ভেবে নেওয়াটা খুব প্রয়োজন। কারণ সম্পর্ক যদি অস্বাস্থ্যকর হয়, তখন নিজেকে ভালো রাখার দায়িত্ব আপনার নিজের।
লেখক: কাউন্সিলর, সাইকোথেরাপি প্র্যাকটিশনার ফিনিক্স ওয়েলনেস সেন্টার, বাংলাদেশ