সেকশন

বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২
Independent Television
 

মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন বাণিজ্য বসন্ত

আপডেট : ২০ মে ২০২৫, ০২:৩৯ পিএম

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি মধ্যপ্রাচ্যের তিন দেশ সৌদি আরব, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) সফর করেছেন। এটা আর এমন নতুন কি কথা। এমনকি হত দরিদ্র দেশের ক্ষমতাধর নেতারা বিভিন্ন দেশ ঘুরে বেরাচ্ছেন অহরহ। শুধু তিনিই নন তারা সাথে নিয়ে চলেন বিরাট বহর। সেই বহরে যুক্ত হন তাদের ছেলে-মেয়ে থেকে নাতিপুতি, চাটুকার সাংবাদিক, পাইকপেয়াদা, বয়-বেয়ারা সবাই। দেশের টাকা পয়সার শ্রাদ্ধ হয় তাতে কি। এগুলো জনগণের অর্থ। আর এই অর্থ তো তাদের সুখের জন্যই ব্যয় হবে। 

এসব কথা বাদ দিয়ে এখন আসল কথায় আসি। এই সফরগুলোর উদ্দেশ্য কি? হয় রাজনৈতিক, না হয় অর্থনৈতিক। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অর্থনৈতিক স্বার্থটাই প্রাধান্য পায়। সেই কথায় আসি। এবারে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যের সফর কি ধরনের অর্থনৈতিক আর রাজনৈতিক সফলতা এনে দিয়েছে। সফলতা যে কি পরিমাণ হয়েছে তা ট্রাম্প সাহেবের অভিব্যক্তি বা বডি ল্যাংগুয়েজই বলে দেয়। হাত-পা ছুড়ে, তালি বাজিয়ে তিনি তা প্রকাশ করতে ভোলেননি। 

সৌদি আরবে ট্রাম্প। ছবি: রয়টার্সসৌদি আরবে তাকে লাল গালিচার জায়গায় বেগুনি গালিচা দিয়ে অভ্যর্থনা জানান হয়। কাতারের রাজপ্রাসাদের সৌন্দর্য তাকে অভিভূত করে। আবুধাবির গ্র্যান্ড মসজিদের সৌন্দর্য তাকে মহিত করে। এছাড়া নারীদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। রাজপ্রাসাদে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নারীরা চুল খুলে মাথা দুলিয়ে এই মহান অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান। এটা হয়তো আরবের রীতি। এভাবে স্বাগত না জানালে কূটনৈতিক রীতিনীতির কোনো খেলাফ হত না। জাগগে  সেসব কথা। 

আসি মূল কথায়, কি পাওয়া গেল এই সফরে। আর কেনই বা এত কিছু পাওয়া গেল। এর বিনিময়েই বা কি পাওয়া গেল। যা কিছু পাওয়া গেল তা রীতিমতো বিস্ময়কর। সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রে ১ লাখ ৪০ হাজার কোটি ডলারের বিনিয়োগ করবে। আর প্রায় ১৪ হাজার ২০০ কোটি বিলিয়ন ডলারের অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র কিনবে। তাহলে বুঝতে পারেন মার্কিন অস্ত্র ব্যবসায়ীরা কি পরিমাণ ফুলেফেঁপে উঠবে। যদি কখন এই অস্ত্র ব্যবহার হয়, তবে তা হবে কোনো না কোনো মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে। ইয়েমেন, ইরান বা অন্য কোনো মুসলিম দেশের বিরুদ্ধে, কোনোভাবেই ইসরায়েল বা মার্কিন স্বার্থের বিরুদ্ধে নয়। আর কাতার সফরে সবচেয়ে দামি উপঢৌকন ৪০ কোটি ডলার দামের একটা বিলাসবহুল ৭৪৭ বোয়িং বিমান দিয়েছে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে। বিমান বললে ভুল হবে এটা একটা উড়ন্ত প্রাসাদ। আরাম আয়েশের যে সমস্ত আয়োজন এটাতে আছে তা সাধারণ মানুষের কল্পনাকেও ছাড়িয়ে যায়। ট্রাম্প সাহেব পুরোনো বিমানে যাতায়াত করেন। তার কষ্টের কথা স্মরণ করে কাতারের আমির এই উপঢৌকনের ব্যবস্থা করেন। 
এটা নিয়ে নাকি বেশ সমালোচনা হয়েছিল। কিন্তু ট্রাম্প সাহেব তা উড়িয়ে দিয়েছেন এই বলে যে, সব সময় সবাই তো রাষ্ট্রীয় উপঢৌকন নিয়ে থাকে। কিন্তু অন্যান্য উপঢৌকনের সাথে এই উপঢৌকনের যে পার্থক্য তা একেবারেই স্পষ্ট। অথচ সেই জায়গায় ফিলিস্তিনের অসহায় শিশুরা ক্ষুধা আর মৃত্যুর পরোয়ানা নিয়ে অসহায় দিনযাপন করছে। ফিলিস্তিনিদের একটা মর্মান্তিক উক্তি মনে পড়ে গেল–সবাই প্রতিদিন পাঁচ বেলা নামাজ পড়ে আর আমরা পড়ি ছয় বেলা। এক বেলা হল ফিলিস্তিনিদের জানাজার নামাজ। এই লেখা যখন লিখছি তখনো দেখলাম ইহুদি রাষ্ট্রের নির্বিচার বোমাবর্ষণে প্রায় একশ নিরীহ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। 

সংযুক্ত আরব আমিরাতে রাজপ্রাসাদে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে নারীরা চুল খুলে মাথা দুলিয়ে এই মহান অতিথিকে অভ্যর্থনা জানান। ছবি: এক্স থেকে নেওয়াএবারে সংযুক্ত আরব আমিরাতের লেনদেনের ব্যাপারটা বলি। রাজসিক অতিথি আপ্যায়নের সাথে বিভিন্ন মডেলের বিপুল সংখ্যক বোয়িং বিমান কেনায় সম্মত হয়েছে দেশটি। আমরা জানি বোয়িং বিমান কোম্পানি বেশ কিছুদিন ধরে মন্দা অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের তৈরি বোয়িং ৭৩৭ ম্যাক্স মডেলের বিমানের যান্ত্রিক ত্রুটি জনিত কারণে বেশ কিছু দুর্ঘটনা ঘটে। প্রতিযোগী এয়ারবাস কোম্পানি এই সুযোগে অনেক এগিয়ে যায়। তবে ট্রাম্পের এই সফর তাদের সেই দুর্যোগ কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবে। এই এক দেশের এক অর্ডারই যথেষ্ট। এক সময় এই বোয়িং কোম্পানির কর্মকর্তারা বাংলাদেশে পর্যন্ত ছুটে এসেছিলেন তাদের বিমান বিক্রির বিক্রির জন্য। 

সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় হলো সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার ঘোষণা। কিন্তু কেন? সিরিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট আহমেদ শারার, যার মাথার মূল্য ঘোষণা করা হয়েছিল ১ কোটি ডলার এবং যিনি আল কায়েদার একজন সক্রিয় সদস্য ছিলেন। এই আহমেদ শারারের সাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সরাসরি আলোচনায় বসে এই ঘোষণা দেন । তার কারণ হল সিরিয়ার বাসার সরকার ছিল ইরানের সরাসরি সমর্থন পুষ্ট। এবং ইসরাইলের জন্য এক মূর্তিমান হুমকি। তাই এদিক থেকে ইসরাইল শঙ্কামুক্ত হলো। আর সেই প্রতিশ্রুতি তার কাছ থেকে আদায় করা হয়েছে নিশ্চয়ই। অপরদিকে ইরান ও রাশিয়ার একটা শক্ত খুঁটি ভেঙে ফেলা গেল। সিরিয়া এখন থেকে তেল রপ্তানি করতে পারবে। এখানে যে ব্যবসায়িক সুযোগ সৃষ্টি হবে সেখানে মার্কিন বহুজাতিক কোম্পানিরা কাজ পাবে বা ব্যবসা করার সুযোগ পাবে। সিরিয়ায় অস্ত্র বিক্রির ভালো সুযোগ আসবে হয়তো। এতদিন যেটা রাশিয়া পেত। 

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও সিরিয়ার অন্তর্বর্তী প্রেসিডেন্ট আহমেদ আল-শারা। ছবি: রয়টার্সসুতরাং ট্রাম্পের এই সফরে শুধু লাভই লাভ। আফগানিস্তান ইরাক ইয়েমেন আর ফিলিস্তিনের লক্ষ লক্ষ মুসলিম হত্যাকারী ইহুদি আর তাদের সবচেয়ে বড় সহযোগী ও আশ্রয়-প্রশ্রয় দাতাদের এত খাতির করার কারণ কি। কারণ একটাই আর তা হলো বংশপরম্পরায় আমার গদি অটুট রাখা। কারণ এদের সিংহাসন চ্যুত করতে খুব বেশি বেগ পেতে হবে না। মিশরের জনগণের ভোটে নির্বাচিত নেতা মুরসিকে শেষ পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত করে জেলে রেখে হত্যা করা হয়, সেখানে অন্যদের ক্ষমতাচ্যুত করা কোনো ব্যাপারই না। সেই কথা মধ্যপ্রাচ্যের রাজতন্ত্রীরা সবাই ভালো করে জানে। 

যুক্তরাষ্ট্র নিজের স্বার্থ আর ব্যবসার বাইরে কিছু বোঝে না। এই দরকষাকষিতেই আজ ভারতের এই অবস্থা। তাদের একান্ত বন্ধু বলে পরিচয় দেওয়া এই বন্ধুর একই আচরণ। ভারতীয় নাগরিকদের হাতে পায়ে শিকল বেধে দেশ থেকে বের করে দেওয়া, এমনকি সর্বশেষ এই সফরে ট্রাম্প অ্যাপলের প্রধান নির্বাহীকে ভারতে আর বিনিয়োগ না করতে বলেছেন। ব্যাপারটা আড়ালে আবডালেও করা যেত। কিন্তু এভাবে প্রকাশ্যে বলাটা যে, ভারতের জন্য কতটা হৃদয় বিদারক ও অপমানজনক তা বলাই বাহুল্য। যাদের তারা তাদের প্রিয় হিসেবে গর্ব ভরে পরিচয় দিতেন, তাদের সাথে এই আচরণ। আমাদের এক শিক্ষক ছিলেন শরৎবাবুর শ্রীকান্ত উপন্যাসের একটা উক্তি বলতেন এভাবে যে, বড় প্রেম শুধু কাছেই টানে না, দূরেও ঠেলিয়া দেয়। তিনি বলতেন একটা শব্দ এখানে বাদ গিয়েছে, আর তা হলো লাথি মারিয়া দূরে ঠেলিয়া দেয়। আমরা খুব হাসতাম। ভারতের প্রসঙ্গে স্যারের কথাগুলো মনে পড়ে গেল। 

ট্রাম্প নাকি সৌদি যুবরাজকে ভালোবেসে ফেলেছেন। এই ভালবাসা কতদিন স্থায়ী হয় তাই এখন দেখার বিষয়। কথাটা মনে রাখা দরকার, আমেরিকা যার বন্ধু তার শত্রুর দরকার হবে না।  

লেখক: বিভাগীয় প্রধান (ব্যবসায় শিক্ষা), বাংলাদেশ স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মাস্কাট, ওমান

[এই মতামত লেখকের নিজস্ব। এর সঙ্গে ইনডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের প্রাতিষ্ঠানিক সম্পাদকীয় নীতিমালার কোনো সম্পর্ক নেই।]

আমেরিকা, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপ কমবেশি শক্তি প্রয়োগ করে এই দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসবে কিনা–তা বুঝতে কিছু ‘ফ্যাক্টর’ বা বিষয় চিহ্নিত করা সম্ভব। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কি এখানেই থেমে যাবে, এই যুদ্ধ কি...
প্রায় দুই বছর ধরে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে গণহত্যা চালানোর পর, লেবানন ও সিরিয়াকে ধ্বংস করার পর, বারবার ইরান ও ইয়েমেনে হামলা চালানোর পর এবং পশ্চিমা রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও গণমাধ্যম...
সেরা ও উজ্জ্বল মেধাবীরা আর যুক্তরাষ্ট্রে ভিড় করছে না। তারা নিজ বাড়িতেই থাকছে অথবা অন্য কোথাও যাচ্ছে। এবং এই বিপর্যয় থেকে চীনের চেয়ে লাভবান হওয়ার মতো আর কোনো দেশ নেই। রোবোটিক্স এবং এআই থেকে...
আমেরিকানদের একটি মৌলিক সত্য জানানো প্রয়োজন। চীন চীনই হবে। চীন তার দীর্ঘ ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ভিত্তিতে বিকশিত হয়েছে ও হবে। আমেরিকার উচিত, চীনকে বদলানোর ভ্রান্ত ধারণা ত্যাগ করা। কিন্তু আপনি...
নির্বাচনের আগে মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার দৃশ্যমান দেখতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরোয়ার। বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান। 
সারাদিনের ক্লান্তি শেষে দরজা খুলতেই আপনাকে দেখে লেজ নাড়িয়ে ছুটে আসে কুকুরটি। চোখে মুখে খুশির ছাপ। আপনাকে সে চিনেছে, মনে রেখেছে, এ তো জানা কথা। কিন্তু জানেন কি, শুধু কুকুরই নয়, মৌমাছি, ঘোড়া কিংবা...
বজ্রাহত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ২০১০ শীতকালীন অলিম্পিকে পদক জয়ী অ্যাথলেট অদুন গ্রনভলদের। নরওয়েজিয়ান স্কি ফেডারেশন গত বুধবার নিশ্চিত করেছে ৪৯ বছর বয়সী স্কি ক্রস পদক জয়ীর মৃত্যুর খবর। ২০১০ ভ্যানকুভার গেমসে...
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.