ভ্রমণের পরিকল্পনা করছেন? আপনার পোশাক এবং মেকআপ ব্যাগ গুছিয়ে নেওয়ার পর, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো সঠিক ভ্রমণের ব্যাগ নির্বাচন করা। বিশাল স্যুটকেসের পরিবর্তে সহজে বহনযোগ্য ট্রাভেল ব্যাগ নেওয়া বুদ্ধিমানের কাজ।
আপনাকে এমন ব্যাগ বেছে নিতে হবে যা শুধু হালকা নয়, বরং সহজেই নিরাপত্তা চেকের লাইন পার হওয়া যায়। সেই সাথে নতুন শহরের রাস্তায় চলাফেরার জন্যেও হতে হবে উপযুক্ত।
সঠিক ব্যাগ বেছে নেওয়া কেন জরুরি?
কুলিনারি ট্র্যাভেল বিশেষজ্ঞ রানি চীমা বলেন, ‘ভ্রমণের ধরন অনুযায়ী সঠিক ব্যাগ বেছে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাগ বাছাইয়ের সময় আপনার ট্রিপের দৈর্ঘ্য, প্যাকিং অভ্যাস এবং প্রয়োজনীয় ফিচারগুলো বিবেচনা করা উচিত।’
আপনি আসলে কি উদ্দেশ্যে ভ্রমণ করছেন, তার উপর নির্ভর করে ব্যাগ বাছাই করতে পারে। যদি আপনার অফিসিয়াল ট্রিপ হয়। তবে ল্যাপটপ এবং কয়েকটি অফিস আউটফিট রাখার জন্য একটি প্রশস্ত টোট ব্যাগ যথেষ্ট হতে পারে। আর যদি লম্বা ভ্রমণে যান। অথবা আপনাকে যদি একাধিক এয়ারপোর্ট ট্রান্সফার সামলাতে হয়, তাহলে হালকা রোলার ব্যাগ সেরা অপশন।
আরাম ও সহজ চলাচলের জন্য ব্যাগটি হতে সেই মতো। খেয়াল রাখতে হবে ব্যাগটি যেন সহজে বহনযোগ্য হয়। বিশেষ করে বিমানবন্দর, ট্রেন স্টেশন বা সিঁড়ি ভাঙার সময়। রানি চীমা বলেন, ‘আপনার ব্যাগ বেছে নেওয়াটা এক ধরনের সেল্ফ-কেয়ার এবং সেল্ফ-লাভ।’ তাই এই বিষয়গুলো অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।
বেশিরভাগ এয়ারলাইনের জন্য সর্বোচ্চ অনুমোদিত ব্যাগের মাপ হলো ২২ x ১৪ x ৯ ইঞ্চি। তাই সেই অনুযায়ী ব্যাগ বেছে নিন। চলুন, আপনার পছন্দের ট্রিপ এবং স্টাইল অনুযায়ী সেরা ভ্রমণ ব্যাগ বেছে নেওয়া যাক।
ভ্রমণে আরামের পাশাপাশি স্টাইলও জরুরি। সঠিক ব্যাগ বেছে নিলে যাত্রা হয়ে উঠবে আরও সহজ ও আনন্দদায়ক। তাই ভ্রমণ অনুসারে ব্যাগ বাছাই করতে হবে।
কেমন ব্যাগ কিনবেন?
অলরাউন্ডার ব্যাগ: ব্যাগের ভেতরে থাকবে ল্যাপটপ স্লিভ, মেশ পাউচ, পানির বোতলের জন্য পকেট, এবং অন্যান্য ছোটখাট প্রয়োজনীয় জিনিস রাখার জন্য আলাদা কম্পার্টমেন্ট। বড় সাইজের এসব ব্যাগে সহজেই দুই দিনের কাপড় ও আনুষঙ্গিক জিনিস বহন করতে পারবেন।
টোট ব্যাগ: ভ্রমণে একটা টোট ব্যাগ রাখতেই পারেন। কর্মব্যস্ত দিন থেকে শুরু করে লং ফ্লাইট—সবক্ষেত্রেই আদর্শ একটি ব্যাগ। ব্যাগটি যেন হালকা হয় সেদিক খেয়াল রাখবেন। আর ভেতরে যেন থাকে প্রশস্ত জায়গা। যেখানে সহজেই ১৬-ইঞ্চির ল্যাপটপ, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক জিনিস রাখা যায়।
কম্পার্টমেন্টযুক্ত ব্যাগ: যারা ব্যাগের প্রতিটি জিনিস আলাদা আলাদা ভাগে রাখতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য আদর্শ। এসব ব্যাগে অনেক পকেট থাকে। যার মধ্যে ল্যাপটপ স্লিপ, জুতার জন্য আলাদা জায়গা ও ছোটখাটো জিনিস রাখার জন্য একাধিক ভাগ থাকে।
ব্যাকপ্যাক: হাত ফাঁকা রেখে আরামে ভ্রমণ করতে চাইলে ব্যাকপ্যাকই সেরা। ওয়াটার-রেজিস্ট্যান্ট রয়েছে এমন ব্যাগ দেখে কিনতে হবে। এসব ব্যাগে হাইড পকেট, প্যাডেড ল্যাপটপ স্লিভসহ ভেতরে একাধিক পকেট থাকে। আর পাশের পানির বোতল রাখার জায়গাও যেন থাকে। আরামদায়কভাবে যারা ভ্রমণ করতে চান তাদের জন্য এটি পারফেক্ট।
ব্যাগ কেনার সময় যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
মেটেরিয়াল: ভ্রমণ ব্যাগের মেটেরিয়াল বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাধারণত ভ্রমণ ব্যাগ দুটি প্রধান ক্যাটাগরিতে ভাগ করা যায়। একটি হার্ড এবং অন্যটি সফট। হার্ড শেল ব্যাগগুলি যেমন রোলার সুটকেস, অত্যন্ত টেকসই এবং ভঙ্গুর জিনিসপত্র সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। অন্যদিকে সফট ব্যাগ যেমন নাইলন থেকে তৈরি ডাফেল ব্যাগ। এগুলো অনেক বেশি নমনীয় এবং সহজে অতিরিক্ত জিনিসপত্র ধারণ করতে সক্ষম।
সাইজ ও ওজন: ব্যাগের সাইজ ও ওজনের দিকে খেয়াল রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আপনার এয়ারলাইন গাইডলাইনের সঙ্গে এটি মেলে কিনা, তা আগে দেখে নিন। খালি অবস্থায় ব্যাগের ওজনের দিকে নজর রাখা দরকার। যাতে তা এয়ারলাইনের নির্ধারিত ওজন সীমা পার না হয়ে যায়। এর পাশাপাশি, একেবারে হালকা ব্যাগ নির্বাচন করলে আপনার ভ্রমণ আরামদায়ক হবে, বিশেষত বিমানবন্দরে ব্যাগ তোলার সময়ে।
কার্যকারিতা: একটি কার্যকরী ব্যাগের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পকেট এবং কম্পার্টমেন্ট থাকা উচিত। যাতে আপনি আপনার জিনিসপত্র সহজে সাজিয়ে রাখতে পারেন। আর প্রয়োজনের সময়ে সেগুলো দ্রুত পেতে পারেন। ব্যাগে ল্যাপটপ স্লিভ, টয়লেট্রিজের জন্য মেশ পকেট এবং ফোন বা পাসপোর্ট রাখার জন্য এক্সটার্নাল পকেট থাকলে আপনার যাত্রা অনেক বেশি সহজ হবে।
লাগেজ সেটআপ: ভ্রমণ ব্যাগ নির্বাচনের সময় আপনাকে পুরো লাগেজ সেটআপ সম্পর্কে ভাবতে হবে। আপনার ক্যারি-অন ব্যাগ এবং পার্সোনাল আইটেমের মধ্যে ভারসাম্য রাখতে হবে। একে অপরকে পরিপূরক হতে হবে। যাতে আপনার ভ্রমণ আরও সহজ হয়। আর কোনো সমস্যা সৃষ্টি না হয়। ক্যারি-অন এবং পার্সোনাল আইটেম একত্রে ব্যবহার করলে তা আপনার ভ্রমণকে আরও সুবিধাজনক করে তোলে। বিশেষ করে বিমানবন্দরে সিকিউরিটি চেক বা ফ্লাইটের সময়।
তথ্যসূত্র: ইনস্টাইল