পাঁচ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার সুমের অঞ্চলে কিউনিফর্ম নামক প্রাচীনতম লিখন পদ্ধতি ব্যবহার করে তথ্য নথিভুক্ত করা শুরু হয়। কিউনিফর্মের উদ্ভবের প্রায় এক সহস্রাব্দ পর এনহেদুয়ান্না নামে এক নারী ধর্মযাজক এই লিখন পদ্ধতিকে নতুনভাবে ব্যবহার করেন। তিনি সম্ভবত নিজের কাজের স্বত্ব দাবি করা প্রথম লেখক।
এনহেদুয়ান্নাকে মনে করা হয় পৃথিবীর প্রথম নারী লেখক। পাঁচ হাজার বছর আগে মেসোপটেমিয়ার উর শহরে (বর্তমান ইরাকের তাল আল মুকায়ের) বাস করতেন তিনি। এনহেদুয়ান্না কেবল প্রথম নারী লেখকই নন, প্রথম প্রধান নারী ধর্মযাজকও ছিলেন।
এনহেদুয়ান্না ছিলেন আক্কাদের অধিপতি সারগন বা সারগন দ্য গ্রেট ও তাশলুলতুমের কন্যা। সারগন আক্কাদীয় সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং আক্কাদীয় ও সুমেরীয় জনগণকে এক শাসনের অধীনে এনেছিলেন। সারগন এনহেদুয়ান্নাকে উরের চন্দ্র দেবতা নান্নার মহাযাজক হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন। এক পর্যায়ে একজন সুমেরীয় রাজা তাকে পদ থেকে উৎখাত করেন এবং নির্বাসনে যেতে বাধ্য করেন। এই অভিজ্ঞতা তাঁর কবিতায় গভীরভাবে প্রতিফলিত হয়েছে।
এনহেদুয়ান্নার রচনা, বিশেষ করে দেবী ইন্নানার প্রতি স্তুতি, মেসোপটেমিয়ার সাহিত্য ও ধর্মীয় জীবনে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। তাঁর কবিতাগুলো প্রার্থনাসংগীতের ভিত্তি স্থাপন করে এবং নারীদের শিক্ষা ও সাহিত্য চর্চায় অনুপ্রাণিত করে।
লেখায় তিনি ব্যক্তিগত দৃষ্টিকোণ থেকে নানা বিষয় তুলে ধরতেন। একটি কবিতায় অভ্যুত্থানের সময় তার প্রতি অসম্মানজনক আচরণ এবং যৌন নিপীড়নের মতো ঘটনার বর্ণনাও রয়েছে। তিনি লেখায় সৃজনশীল প্রক্রিয়া নিয়েও প্রতিফলন করেছেন, তাঁর কবিতা রচনাকে সন্তান জন্মদানের সাথে তুলনা করেছেন।
১৯২৭ সালে ব্রিটিশ প্রত্নতাত্ত্বিকেরা এনহেদুয়ান্নার কাজের কপি পুনরায় আবিষ্কার করেন। কিন্তু তাঁর কৃতিত্বকে স্বীকৃতি দিতে পণ্ডিতদের কয়েক দশক লেগেছিল। পুরুষ ইউরোপীয় পণ্ডিতরা তাঁকে লেখক হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা বোধ করেন, কারণ সেই সময়ে তারা নারীদের সাক্ষরতার সাথে যুক্ত করতে পারেননি। আজও কেউ কেউ তাঁর রচনা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তবে তাঁর কবিতার গভীর ব্যক্তিগত প্রতিফলন এবং মৃত্যুর পরও তাঁর নামে কাজগুলো ধারাবাহিকভাবে দাবি করা থেকে এটা স্পষ্ট যে তিনিই ছিলেন এই রচনার লেখক।
মাত্র ৩৫ বছর বয়সে এনহেদুয়ান্না মারা যান। তাঁর ছোট জীবনে কবিতা ও সাহিত্যের প্রতি গভীর ভালোবাসা রেখে গেছেন তিনি। তাঁর কাজের স্থায়ী প্রভাব ছিল। এনহেদুয়ান্নার লেখা আজও সাহিত্যপ্রেমীদের অনুপ্রাণিত করে।
তথ্যসূত্র: হিস্ট্রি ডট কম, বিবিসি