সেকশন

সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২
Independent Television
 

ইরান-ইসরায়েল সংঘাত বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্য নাড়িয়ে দিতে পারে

আপডেট : ২৩ জুন ২০২৫, ১০:৩৩ পিএম

ইরানে সংঘাত কীভাবে বৈশ্বিক ক্ষমতার ভারসাম্যে প্রভাব ফেলতে পারে? মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এই যুদ্ধে ইসরায়েলের পক্ষে যোগদানের পর থেকে এত দ্রুত ঘটনা ঘটছে যে, তা বিবেচনা করে এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া বোকার মতো কাজ বলে মনে হতে পারে। তেহরান প্রতিশোধ নেবে, নাকি শান্তির পথে এগোবে–তার ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।

তবুও আমেরিকা, চীন, রাশিয়া ও ইউরোপ কমবেশি শক্তি প্রয়োগ করে এই দ্বন্দ্ব থেকে বেরিয়ে আসবে কিনা–তা বুঝতে কিছু ‘ফ্যাক্টর’ বা বিষয় চিহ্নিত করা সম্ভব। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি কি এখানেই থেমে যাবে, এই যুদ্ধ কি ইরানে সরকারপতন ঘটাবে, নতুন সরকার কি আমেরিকার প্রতি কম শত্রুভাবাপন্ন হবে, নাকি দেশটিকে অরাজকতার দিকে ঠেলে দেওয়া হবে?

আরও কয়েকটি বিষয় বিবেচনায় রাখা যেতে পারে। আমেরিকা কি এই যুদ্ধে নিজেদের সম্পৃক্ততা কমিয়ে কেবল একটি বড় হামলাতেই সীমাবদ্ধ রাখবে, নাকি দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধে জড়িয়ে পড়বে। আর বিশ্বের বাকি দেশগুলো কি আমেরিকাকে তখন ‘দুর্বৃত্ত’ হিসেবে দেখবে। কেননা বিশ্ববাসীর মনোযোগ সরিয়ে ইসরায়েল যদি গাজায় আরও মানুষকে হত্যা করে, তখন অনেকেই এতে সহায়তা দেওয়ার কারণে আমেরিকাকে দুষবে। 

তেলের দামও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’: এই সংঘাতের শুরুতে গত ১৩ জুন ইরানে ইসরায়েল প্রথমবার বোমা ফেলার পর গত শুক্রবার পর্যন্ত প্রতি ব্যারেল ব্রেন্ট ক্রুড তেলে খরচ বেড়েছে ১১ শতাংশ। ট্যাঙ্কার দিয়ে তেল সরবরাহ কিংবা পাইপলাইনে কোনো ব্যাঘাত ঘটলে এই খরচ আরও বাড়তে পারে। 

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে, এই তিন পক্ষের বাইরের কোনো দেশ এই সংকট কাটাতে ভূমিকা রাখে কিনা এবং এর মাধ্যমে নিজেদের কোনো ফায়দা নেবে কিনা। 

ট্রাম্পের সামনে চ্যালেঞ্জ
এই সংঘাতে অনেক কিছুই পাওয়ার কিংবা হারানোর আছে আমেরিকার। ইরানের পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করতে পারা হবে তাদের সবচেয়ে বড় অর্জন এবং এটি করতে পারলে বিশ্ববাসীকে আরও দৃঢ়ভাবে জানান দেওয়া যাবে যে, আমেরিকা হচ্ছে বিশ্বের ‘সুপারপাওয়ার’ বা ‘পরাশক্তি’। কিন্তু ট্রাম্প তেহরানের পারমাণবিক সমৃদ্ধকরণ স্থাপনা সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করার দাবির পরও কিছু বিশেষজ্ঞ মনে করছেন যে, এর পারমাণবিক হুমকি এখনও শেষ হয়নি।

যুদ্ধে যোগ দিয়ে আমেরিকা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে বলে শঙ্কায় রয়েছেন ট্রাম্পের কিছু বিশেষ রিপাবলিকান সমর্থক, উপসাগরীয় মিত্র রাষ্ট্র এবং কিছু ইউরোপীয় নেতা। কিন্তু ট্রাম্প যদি ইরানের পারমাণবিক হুমকি সামলাতে পারেন এবং দীর্ঘ সংঘাত এড়াতে সক্ষম হন, তাহলে সেই সন্দেহ দূর হয়ে যাবে। এরপর আমেরিকা মধ্যপ্রাচ্যের বদলে অন্যতম পরাশক্তি হিসেবে তাদের একমাত্র হুমকি চীনে মনোযোগ দিতে সক্ষম হবে। এমনটাই বলছেন আমেরিকার সেন্টার ফর আ নিউ আমেরিকান সিকিউরিটির (সিএনএএস) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রিচার্ড ফন্টেইন। 

এই সংঘাত যদি আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির নেতৃত্বে গঠিত ইরান সরকারকে উৎখাত করতে সক্ষম হয়, এরপর কী হতে পারে–তা অস্পষ্ট। যদিও একটি নতুন সরকার ওয়াশিংটনের প্রতি কম প্রতিকূল হতে পারে। তবে এটি ঠিক আগের মতো প্রতিকূলও হতে পারে। আর ইরান যদি একটি ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত হয়, আমেরিকান মিত্র ও শত্রুরা এই অঞ্চলকে ধ্বংস এবং আরও অস্থিতিশীল করার জন্য তাদের দোষারোপ করবে। 

যদি আমেরিকা একটি নতুন ‘চিরস্থায়ী’ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে তারা আরও বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হবে। চ্যাথাম হাউসের (রয়্যাল ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স) বিশিষ্ট ফেলো এবং লেডওয়েল অ্যাডভাইজরির পরিচালক রবিন নিবলেট বলছেন, ‘ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান ও ইরাকে এমন করেছিল আমেরিকা। এই সবই কিন্তু মার্কিন শক্তি বৃদ্ধি করেনি, বরং হ্রাস করেছে।’

ইরান সংঘাতের ফলে তেলের দামে বড় ধরনের ধাক্কা লাগলেও ট্রাম্প ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। উদাহরণস্বরূপ, যদি ইরান হরমুজ প্রণালী দিয়ে অপরিশোধিত তেল পরিবহন বন্ধ করে দেয়, তাহলে এমন ঘটনাই ঘটতে পারে। যদিও আমেরিকান তেল কোম্পানিগুলো দাম বাড়িয়ে লাভবান হবে, কিন্তু ভোটাররা পেট্রোলের জন্য বেশি দাম দিতে রাজি হবে না।

হুগো ডিক্সন। ছবি: সংগৃহীতউত্থানের অক্ষশক্তি
রিচার্ড ফন্টেইন এই উত্থানের অক্ষশক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেছেন ইরানকে। এতে আরও থাকছে রাশিয়া, চীন ও উত্তর কোরিয়া। যদিও এটি আনুষ্ঠানিক কোনো জোট নয়, ইউক্রেন যুদ্ধে মস্কোকে উল্লেখযোগ্য সহায়তা দিয়েছে তেহরান, বেইজিং ও পিয়ংইয়ং।

ইরান যদি পরমাণু কর্মসূচি বন্ধ করে দেয়, তাহলে রাশিয়া ও চীন খুশিই হবে। কেননা তেহরানকে এই কার্যক্রম আটকানোর জন্য করা ২০১৫ সালের চুক্তিতে তারাও সই করেছিল। কিন্তু ইরানের নতুন সরকার সেই অবস্থান থেকে যদি নিজেদের সরিয়ে নেয়, তাহলে এসব দেশ মোটেও খুশি হবে না।   

গত জানুয়ারিতে তেহরানের সঙ্গে ২০ বছরের কৌশলগত অংশীদারত্বের চুক্তি করা মস্কোর জন্য এই পরিস্থিতি বেশ বাজেই হবে। তাদের সিরীয় মিত্র বাশার আল-আসাদকে রক্ষা করতে না পারার পর এবার খামেনির সরকারকে কোনো সহায়তা না করতে পারলে তাদেরকে আরও দুর্বলই মনে হতে পারে। 

ইরান সংঘাত রাশিয়ার ইউক্রেন যুদ্ধের ওপর কীভাবে প্রভাব ফেলবে, তা প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে। তারা ড্রোনের একটি কার্যকর উৎস হারাতে পারে। কিন্তু তেলের দাম বাড়লে যুদ্ধের অর্থায়নের জন্য ক্রেমলিন আরও নগদ অর্থ পাবে। এবং যদি আমেরিকা ইরানের সাথে দীর্ঘ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে ওয়াশিংটন কিয়েভে সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ কমিয়ে দিতে পারে।

আরেকটি ব্যাপার ঘটতে পারে, যদিও তা বাস্তবে হবে বলে মনে হচ্ছে না। ইরানে হামলা চালানোর আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দেওয়া ইঙ্গিত মোতাবেক এই সংঘাতের শেষদিকে হলেও মস্কো যদি ওয়াশিংটন ও তেহরানের মধ্যে একটি চুক্তি করিয়ে দিতে পারে, তবে তার বিনিময়ে রাশিয়া হয়তো ট্রাম্পকে ইউক্রেনের প্রতি মার্কিন সমর্থন আরও কমাতে বাধ্য করতে পারবে। এমনটাই বলছেন মন্টেইন ইনস্টিটিউটের ভূ-রাজনীতি এবং কূটনীতি বিষয়ের বিশেষ উপদেষ্টা ও সিনিয়র ফেলো মিশেল ডুকলোস।

চীনের জন্য, তেলের দাম বৃদ্ধি খারাপ খবর হবে। কারণ তারা হাইড্রোকার্বন আমদানি করে। অন্যদিকে তেহরানের শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের ফলে এই অঞ্চলের একটি গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানোর ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। কিন্তু যদি আমেরিকা নতুন করে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে, তাহলে চীন লাভবান হবে। ইরাকে আমেরিকান আক্রমণের পর, বেইজিং তার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তি গড়ে তোলে। চীন অন্যান্য দেশের আস্থাও অর্জন করতে পারে এই যুক্তি দিয়ে যে, তারা একটি দায়িত্বশীল জাতি। অন্যদিকে আমেরিকা একটি আগ্রাসী আধিপত্যবাদী। ট্রাম্পের বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে এই ব্যাখ্যা এরই মধ্যে দাঁড় করিয়ে ফেলেছে তারা। 

রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ও ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাগচি। ছবি: রয়টার্সইউরোপের ঝুঁকি
এই সংঘাত যত সামনের দিকে যাবে, ইউরোপের ততই ক্ষতি। জ্বালানি তেলের দাম বাড়লে তারা বেশ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। কেননা সবচেয়ে বেশি তেল আমদানি করে তারাই। অন্যদিকে, ইরানে বিশৃঙ্খলা যত বাড়বে, ততই ইউরোপে অভিবাসনপ্রত্যাশীর অনুপ্রবেশ বৃদ্ধি পাবে, যা পরে কট্টর জাতীয়তাবাদকে উসকে দেবে। ইরানের ৯ কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যা সিরিয়ার চেয়ে চারগুণ বেশি। উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে এই সিরিয়া থেকে যাওয়া শরণার্থীদের সংকটই ইউরোপীয় রাজনীতিতে ব্যাপক অস্থিরতা সৃষ্টি করেছিল।

ইউরোপের সবচেয়ে বড় ঝুঁকি হচ্ছে, ইরানে সংকট ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সহায়তা করবে। পক্ষান্তরে, আমেরিকা ও ইরানের মধ্যে কোনো চুক্তি করিয়ে দিতে পারলে বেশ সুবিধাই পাবে তারা। যদিও ইরানে হামলা চালানোর আগে ট্রাম্প সেই সম্ভাবনাকে উড়িয়ে দিয়েছেন। 

তাই বলা যেতে পারে, এই সংঘাতে কী হতে যাচ্ছে–তা অনুমান করার মতো অনেক কিছুই রয়েছে। কিন্তু এমন অনেক কিছুই রয়েছে–যা আসলে বোঝা যাচ্ছে না। কিছু ব্যাপার রয়েছে, যা আসলে কারও হাতেই নেই। তবে যেটাই হোক না কেন, এই সংকটই ঠিক করে দিতে পারে আমেরিকা কি পরাশক্তি হিসেবে আরও শক্তপোক্ত অবস্থানে যাবে, নাকি চীন আরও প্রভাব বাড়াতে সক্ষম হবে।

হুগো ডিক্সন: রয়টার্সের নিয়মিত মতামত লেখক এবং ব্রেকিংভিউস বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও সাবেক প্রধান সম্পাদক 

(হুগো ডিক্সনের এই লেখাটি বার্তা সংস্থা রয়টার্সে প্রকাশিত হয়েছে। লেখাটির গুরুত্ব বিবেচনায় ইংরেজি থেকে অনুবাদ করে প্রকাশ করা হলো।)

টাইমলাইন: মধ্যপ্রাচ্য সংকট
২৫ জুন ২০২৫, ১৭:০৮
ইউরোপীয় মিত্ররা ইউক্রেনের প্রতিরক্ষায় অর্থায়ন ও সমর্থন বাড়াতে, সহায়তা ও সামরিক সমর্থন বৃদ্ধি করতে এবং নিষেধাজ্ঞা বাড়াতে সচেষ্ট হয়েছে। ইউরোপ ও কানাডা বনাম আমেরিকার ভিন্ন ভিন্ন অগ্রাধিকারের...
ইরানের ওপর ইসরায়েলের আকস্মিক হামলার পর আন্তর্জাতিক যেসব রাজনীতিক এর বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন তাদের অন্যতম কংগ্রেস নেত্রী সোনিয়া গান্ধী। নিজে দুরাযোগ্য ক্যানসারে অসুস্থ থাকার পরেও ইসরায়েল ও আমেরিকার...
কীভাবে ইসরায়েল গত ১৩ জুনের আকস্মিক হামলার প্রথম প্রহরে ইরানি ভূখণ্ডের ভেতর থেকে ঝাঁকে ঝাঁকে আক্রমণকারী ড্রোন নিক্ষেপ করেছিল? এটাকে রুশ সামরিক ভাষ্যকারেরা ইরানের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে...
ইরানের বিরুদ্ধে নেতানিয়াহুর যুদ্ধকে সমর্থন করা হবে একটি ভয়াবহ ভুল। যুদ্ধে না গিয়ে, ট্রাম্পের উচিত আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সাথে কাজ করে নেতানিয়াহুকে সংযত করা এবং জরুরিভাবে একটি কূটনৈতিক সমাধানের...
হবিগঞ্জের বাহুবল উপজেলায় ট্রাক ও মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে হাসান খান শাহেদ (২৪) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন আরও দুজন।
মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন আগামীকাল সোমবার বিকেল ৫টা থেকে বন্ধ থাকবে। আজ রোববার এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণ ও পরিচালনার দায়িত্বে থাকা ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি...
ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহ-সভাপতি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সূর্যসেন হল শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আরেফিন সিদ্দিক সুজনকে (৩৪) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
লোডিং...

এলাকার খবর

 
By clicking ”Accept”, you agree to the storing of cookies on your device to enhance site navigation, analyze site usage, and improve marketing.