প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের নয়টি গ্রামসহ উপকূলীয় ১৪টি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এতে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের প্রধান সড়ক ও বাজারগুলো প্লাবিত রয়েছে।
গতকাল রোববার দুপুর থেকে শুরু হওয়া জোয়ারে এসব গ্রাম প্লাবিত হয়। জোয়ারের প্রভাবে হাতিয়ায় নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে চার থেকে পাঁচ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়। এতে নিঝুমদ্বীপ ইউনিয়নের মোল্লা গ্রাম, মুন্সি গ্রাম, আদর্শ গ্রাম, বান্দাখালী গ্রাম, ডুবাইয়ের খাল গ্রাম, ইসলামপুর গ্রাম, আনন্দগুচ্ছ গ্রাম, বাতায়ন গ্রাম, বসুন্ধরা গ্রাম ও ধানসিঁড়ি গ্রাম, পূর্বাচল গ্রাম, হরণী ইউনিয়নের চর ঘাসিয়া, বয়ারচর গ্রাম, নলচিরা ইউনিয়নের তুফানিয়া গ্রাম, তমরদ্দি ইউনিয়নের পশ্চিম তমরদ্দি গ্রাম প্লাবিত হয়। এসব সড়ক এলাকায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। পানি ঢুকে পড়েছে বাড়িঘরে।
নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নুরুল আফছার মো. দিনাজ উদ্দিন জানান, রোববার দুপুর থেকে টানা বর্ষণ ও জোয়ারের পানি ঢুকে নিঝুম দ্বীপ ইউনিয়নের নয়টি গ্রাম প্লাবিত হয়। এতে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার মানুষ ঘরবন্দী হয়ে পড়ে। পানিতে ভেসে গেছে গবাদিপশুর খাদ্য ও মাছের ঘের। তলিয়ে গেছে শাকসবজিসহ নানা ফসলের জমি।
হাতিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শুভাশিষ চাকমা জানান, যাত্রীদের জানমাল ও নিরাপত্তার স্বার্থে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত হাতিয়ার সঙ্গে সব চলাচল বন্ধ থাকবে। হাতিয়ায় ২৪২ আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক বিষয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
এদিকে রিমাল পূর্ণশক্তি নিয়ে উপকূল অতিক্রম করছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদ আবুল কালাম মল্লিক। এই আবহাওয়াবিদ বলেন, আজ সোমবার বেলা ১০টার পর থেকে দুর্বল হতে শুরু করবে এই প্রবল ঘূর্ণিঝড়টি। এদিকে রিমালের প্রভাবে এরই মধ্যে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বৃষ্টি শুরু হয়েছে।
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, রিমালের প্রভাবে সকাল থেকে সারা দেশে ধমকা হাওয়াসহ বৃষ্টি হতে পারে। সোমবার ও মঙ্গলবার এর প্রভাব থাকতে পারে। আর সোমবার সকাল ১০টার পর থেকে ঘূর্ণিঝড়টি দুর্বল হতে শুরু করতে করতে পারে।
আবহাওয়ার সবশেষ বিজ্ঞপ্তিতে (১৭) বলা হয়েছে, এই সময়ে পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এসব বন্দরের আশপাশের উপকূলীয় জেলা ও দ্বীপ-চর সমূহ এই মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে দেখাতে বলা হয়েছে নয় নম্বর মহাবিপদ সংকেত। পাশাপাশি এসব বন্দরের আশপাশের উপকূলীয় জেলা ও দ্বীপ-চর সমূহ এই মহাবিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থান করা মাছ ধরার নৌকাকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ স্থানে থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।
সোমবার সকাল পৌনে ৭টার দিকে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে দেখা গেছে, থেমে থেমে আসা দমকা বাতাসের সঙ্গে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে। এতে বিপাকে পড়েছেন অফিসগামী মানুষজন। পাশাপাশি বৃষ্টির কারণে সড়কে গণপরিবহনের সংখ্যাও কম দেখা গেছে।