অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমাল স্থল গভীর নিম্নচাপ আকারে দূর্বল হয়ে সোমবার বাংলাদেশ পার হলেও উপকূলে রেখে গেছে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির চিহ্ন। আর দুর্বল হওয়ার পরও বহু সময় ধরে চলে এর তাণ্ডব। গতিবেগের ওঠানামাও ছিল বড় ব্যবধানে। ফলে এসব নিয়ে নানা মহলে চলেছে আলোচনা, সমালোচনা। এত বড় ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষয়ক্ষতির যে আশঙ্কা ছিল, আদতে সেটা না হওয়ায় স্বস্তি পেয়েছে উপকূলের মানুষ, বলছেন আবহাওয়া বিশ্লেষকেরা।
গত কয়েক দশকে বাংলাদেশে ভয়াবহ ঘর্ণিঝড়গুলোর মধ্যে অন্যতম সিডর, আইলা। কিন্তু সেসব ঘূর্ণিঝড় যতটা সময় ধরে উপকূলে তাণ্ডব চালায়, তারচেয়ে বেশি সময় ধরে চলে প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব।
রোববার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আছড়ে পড়ার পর, ১৩ ঘণ্টা ধরে ব্যাপক শক্তি নিয়ে চলে ধ্বংসযজ্ঞ। ফুঁসে ওঠা নদীর পানিতে প্লাবিত হয় জনপদ। সোমবার সকালে দুর্বল হওয়ার পরও এর প্রভাব উপকূলীয় এলাকায় ছিল লক্ষ্যণীয়। বাঁধে ভাঙন-জলোচ্ছ্বাসের কারণে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বিভিন্ন জেলায়।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের আচরণ ছিল অন্য ঝড়ের তুলনায় সম্পূর্ণ ভিন্ন। এটি দুর্বল হয়ে সোমবার ভোর ৬টায় প্রবল ঘূর্ণিঝড় থেকে ঘূর্ণিঝড়ে এবং পরে স্থল গভীর নিম্নচাপে রূপ নেয়। কিন্তু তারপরও দিনভর ঝোড়ো হাওয়া আর বৃষ্টি চলে দেশজুড়ে-ই।
১৯ জেলায় ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব
ঘূর্ণিঝড় রিমাল তাণ্ডব চালিয়েছে ১৯ জেলায়। সরকারের দেওয়া তথ্যমতে সোমবার বিকেল পর্যন্ত এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩৭ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ জন মানুষ। ঘূর্ণিঝড়ে পুরোপুরি বিধ্বস্ত হয়েছে সাড়ে ৩৬ হাজার ঘরবাড়ি। ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের পর উপকূলীয় এলাকায় দেখা দেয় দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি। প্রবল জোয়ারে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে, কোথাও পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা।
বাগেরহাটে দশ হাজারের বেশি ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়েছে। আংশিক বিধ্বস্ত ৩৫ হাজারের বেশি। এ ছাড়া সদর, শরণখোলা, মোরেলগঞ্জ, রামপাল ও মোংলায় বাঁধ ভেঙে চার শর বেশি পরিবার পানিবন্দী। খুলনার দাকোপে বাঁধ ভেঙে জোয়ারের পানি ঢুকে পড়ে লোকালয়ে। সোমবার সকাল হওয়ার পর নিজ উদ্যোগ মেরামত শুরু করেন স্থানীয়রা।
নোয়াখালীতে অস্বাভাবিক জোয়ারে হাতিয়ার নিঝুপ দ্বীপ, চরঘাসিয়া, ঢালচরসহ ৩ উপজেলার কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে।
ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা। এ ঝড়ের বাতাসের সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায় ১১১ কিলোমিটার। বিভিন্ন সময় ওঠানামা করেছে এ গতিবেগ। বিগত ঘূর্ণিঝড়গুলোর ক্ষেত্রে এমনটি দেখা যায়নি। ঝড়-জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কলাপাড়া ও রাঙ্গাবালীর বেড়িবাঁধও।
বরগুনায় ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে ৩ হাজার ৩৭৪টি ঘর সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত হয়েছে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১৩ হাজার ৩৪টি ঘর। জলোচ্ছ্বাসে বেড়িবাঁধ উপচে পানি ঢুকে ৩০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে ৪ হাজার ১৫৭ হেক্টর মাছের ঘের পানি ঢুকে মাছ ভেসে গেছে। এ ছাড়া ৬ হাজার একর কৃষি জমি মানিতে প্লাবিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃস্ট জলোচ্ছ্বাসে বরগুনায় ১২ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বরিশালে নদীর পানি স্বাভাবিক জোয়ারের তুলনায় ৮-৯ ফুট উঁচুতে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নগরীর নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। ঝালকাঠির সুগন্ধা ও বিশখালী নদীর পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৭ থেকে ৮ ফুট বেড়েছে। এতে জেলা শহরের কয়েকটি সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। বাসা-বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে পানি ঢুকে পড়েছে।
ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী সাতক্ষীরা, ঝালকাঠি, বরিশাল, পিরোজপুর, ভোলা, ফেনী, ক্ক্সবাজার, চট্টগ্রাম, লক্ষীপুর, চাদপুর, নড়াইল, গোপালগঞ্জ, শরীয়তপুর ও যশোর জেলায়ও ব্যপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব জেলার ১০৭টি উপজেলা ক্ষতিগ্রস্ত।
৮ জেলায় ১৩ জনের মৃত্যু
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে জলোচ্ছ্বাসের পর উপকূলীয় এলাকায় দেখা গেছে দমকা হাওয়া ও বৃষ্টি এবং প্রবল জোয়ারে কোথাও বেড়িবাঁধ ভেঙে, কোথাও পানি উপচে প্লাবিত হয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বিভিন্ন জেলায় বিধ্বস্ত হয়েছে বাড়িঘর, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন অনেক এলাকা। এদিকে, ঘূর্ণিঝড়ে এখন পর্যন্ত ৮ জেলায় ১৩ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। ঘূর্ণিঝড়ে পটুয়াখালীতে ৩, সাতক্ষীরায় ১, ভোলায় ৩, চট্টগ্রাম ১, কুমিল্লা ১, বরিশালে ২ এবং খুলনায় ১ জনের মৃত্যু হয়েছে।
সুন্দরবনের ক্ষয়ক্ষতি
সিডর, আইলা, আম্ফান কিংবা রিমাল যেকোনো দুর্বিপাকে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়ে আমাদের রক্ষা করেছে সুন্দরবন। যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় এই সুন্দরবনকে। এবারও তাই হলো। ঘূর্ণিঝড় রিমালে আট থেকে দশ ফুট জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন। ভেঙে গেছে গাছ, নষ্ট হয়েছে মিষ্টি পানির আধার। বন বিভাগ বলছে, বণ্য প্রাণিরও ক্ষতি সাধন হয়েছে ঘূর্ণিঝড়ে। ইতিমধ্যে একটি মৃত হরিণ ও নয়টি আহত হরিণ উদ্ধার করেছে বন বিভাগ। তবে, বৈরী আবহাওয়ার কারণে পূর্ণাঙ্গ ক্ষয়ক্ষতি এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি।
ঘূর্ণিঝড়ে আট থেকে দশ ফুট পানিতে প্লাবিত হয়েছে সুন্দরবন। রোববার দুপুরেই সুন্দরবনের করমজল, দুবলা, কটকা, বন বিভাগের ১৬টি ক্যাম্পসহ বিস্তীর্ণ অঞ্চল পানিতে প্লাবিত হয়। এর আগে ২০১৯ সালে আম্ফানে ও ২০২২ সালে ইয়াসে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় সুন্দরবন।
বিদ্যুৎহীন আড়াই কোটি মানুষ
ঘূর্ণিঝড়ের আঘাতে উপকূলের জেলাগুলোর বিদ্যুৎ নেটওয়ার্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বিদ্যুৎহীন আড়াই কোটি মানুষ। ক্ষতি এড়াতে অনেক এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে, বিদ্যুৎ না থাকায় সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার বন্ধ রয়েছে। এতে মোবাইল নেটওয়ার্ক বিভ্রাট অনেকটা দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে।
লক্ষ্মীপুরে রোববার মধ্যরাত থেকে জেলার কোথাও নেই বিদ্যুৎ। বিদ্যুৎ কখন স্বাভাবিক হবে তা বলতে পারছে না বিদ্যুৎ অফিস। বিদ্যুৎ না থাকায় ব্যহত হচ্ছে মোবাইল নেটওয়ার্কও। এদিকে, লক্ষ্মীপুর-রামগতি সড়কে রাস্তার ওপর গাছ উপড়ে পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। গাছ সরিয়ে সোমবার দুপুর নাগাদ যোগাযোগ স্বাভাবিক হয়।
বাগেরহাটে রোববার বিকেল থেকে প্রায় ৫ লাখ গ্রাহক বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন রয়েছে। শরীয়তপুরে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকায় প্রায় ৩ লাখ ৬৫ হাজার গ্রাহক বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
রোববার দুপুর থেকে বিদ্যুত বিচ্ছিন্ন সাতক্ষীরা। ঝালকাঠিতে কয়েকটি সড়কে গাছ পড়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে গাছ সরিয়ে নিলে স্বাভাবিক হয় যান চলাচল। পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে বিদ্যুৎ না থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন এলাকার জনগণ।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারা দেশে প্রায় ২৫ হাজার মোবাইল টাওয়ার অচল হয়ে গেছে। যার ফলে মোবাইল যোগাযোগেয় বড় ধরনের বিভ্রাট দেখা দিয়েছে, বলে জানিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন- বিটিআরসি।
এ ছাড়া বরিশাল, ভোলা, বরগুনা, মাদারীপুরসহ উপকূলীয় বিভিন্ন এলাকা এখন পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন রয়েছে বিদ্যুৎ।
বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বাতিল
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে দেশের অধিকাংশ এলাকায় বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করছে। এই বৈরী আবহাওয়ার কারণে বাতিল করা হয়েছে বাংলাদেশ বিমানের বেশ কয়েকটি ফ্লাইট। সোমবার এসব ফ্লাইট বাতিল করা হয়। এ ছাড়া কয়েকটি ফ্লাইট অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, বাতিল হওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে রয়েছে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম রুটের ১টি, সৈয়দপুরের ৫টি ও বরিশালের ২টি ফ্লাইট। অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া ফ্লাইটগুলোর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) শারজাহ থেকে চট্টগ্রামের ফ্লাইট সিলেটে সরিয়ে নেওয়া হয়। এ ছাড়া কাতারের দোহা থেকে চট্টগ্রাম আসা ফ্লাইটও সিলেটে পাঠানো হয়। এ ছাড়া রাজশাহী–ঢাকা ও জেদ্দা–ঢাকার একটি ফ্লাইটও সিলেটে সরিয়ে নেওয়া হয়।
এর আগে গতকাল ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের আজকের কক্সবাজারগামী সকল ফ্লাইট এবং কলকাতাগামী দুইটি ফ্লাইট বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছিল।
পাহাড় ধ্বসের শঙ্কা
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সৃষ্ট অতিবৃষ্টির কারণে পার্বত্য জেলাগুলোতে পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সরিয়ে নিতে মাইকিং করছে প্রশাসন। তবে, পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকার দাবি করে এখনো কেউ আশ্রয়কেন্দ্রে যায়নি। নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রয়োজনে জোর করা হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে অঝোর ধারায় বৃষ্টি ঝড়ছে। এমন ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে চট্টগ্রামের লালখান বাজারে যে কোন মুহূর্তে হতে পারে পাহাড় ধ্বস। তাই, স্থানীয়দের সরে যাওয়ার তাগাদা দেয়া হচ্ছে। তবে, প্রশাসনের নানা উদ্যোগের পরও ঝুঁকিপূর্ণ আবাস ছেড়ে যায়নি কেউ। তারা বলছেন, আশ্রয়কেন্দ্রে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা নেই।
এদিকে, খাগড়াছড়ির সবুজবাগ, শালবাগান ও কলাবাগানসহ বিভিন্ন জায়গায় পাহাড় ধসের ঝুঁকিতে প্রায় সাড়ে ৩ হাজার পরিবার।
ঝুঁকিতে থাকা বাসিন্দাদের সরিয়ে নেওয়া, ক্ষয়ক্ষতি কমানো এবং দুর্যোগ কবলিতদের সহায়তায় সব প্রস্তুতি নিয়েছে প্রশাসন। রাঙামাটি ও বান্দরবানেও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বসবাসকারীদের সরে যেতে বলা হচ্ছে। এরই মধ্যে রাঙামাটির ২১টি সরকারি অফিস ও বিদ্যালয়কে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্র ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজধানীতে রিমালের প্রভাব
ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে দিনভর। সন্ধ্যায়ও বৃষ্টি দেখা যায়। এতে মিরপুর, যাত্রাবাড়ী, গ্রিনরোডসহ বেশকিছু এলাকায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। ফলে চরম দুর্ভোগে পড়তে হয় রাজধানীবাসীকে। সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে চাকরিজীবী ও শিক্ষার্থীরা।
সোমবার টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর গ্রিনরোডে প্রধান সড়কে পানি জমে যায়। রাস্তায় হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায় যানবাহন। বৃষ্টিতে ভিজেই অনেককে যেতে হয় কর্মস্থলে। চরম দুর্ভোগে পড়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। স্কুল খোলা ও পরীক্ষা থাকার কারণে বৃষ্টি উপেক্ষা করেই যেতে হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে।
ঝড়ের কারণে রাজধানীতে অনেক সড়কে ভেঙে পড়েছে গাছ। ফলে ব্যাহত হয় যান চলাচল। রাজধানীবাসীর দুঃসময়ের সুযোগ নিতে দেখা যায় রিকশা ও অটোরিকশার চালকদের। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় বেশি ভাড়া আদায় করে তারা। বেশ কয়েকজন এমন অভিযোগ করেছেন।
আবহাওয়া অফিস বলছে, ১২ ঘণ্টায় ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ১৪৩ মিলিমিটার। মঙ্গলবারও বৃষ্টির পূর্বাভাস রয়েছে।
মেট্রোরেল ও বঙ্গবন্ধু টানেলে রিমালের প্রভাব
রিমালের প্রভাবে বৈরী আবহাওয়া সিগন্যালে ত্রুটির জন্য আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশে মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ রয়েছে বলে জানিয়েছে ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল)। ডিএমটিসিএলের পক্ষ থেকে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে সারাদেশে হালকা থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এছাড়া সৃষ্ট বৈরী আবহাওয়ার জন্য আগারগাঁও থেকে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেল চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
এরআগে সকালে দুই ঘণ্টা বন্ধ ছিল মেট্রোরেল। ফলে ভোগান্তিতে পড়ে অফিসগামী যাত্রীসহ নিয়মিত মেট্রো ব্যবহারকারীরা। দুই ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর ফের চলাচল শুরু করে মেট্রোরেল। সেসময় ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) জানায়, আপাতত একটি লাইনে চলাচল করতে দেখা যায় মেট্রোরেল। পুরোপুরি চলাচলে কাজ করা হচ্ছে।
প্রবল ঘূর্ণিঝড় রিমালের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ১৭ ঘণ্টা বন্ধ থাকে চট্টগ্রাম বিমানবন্দর ও ১২ ঘণ্টা বন্ধ থাকে বঙ্গবন্ধু টানেল। পরে সোমবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে যান চলাচলের জন্য খুলে নেওয়া হয় টানেলটি। এদিকে, সোমবার ভোর ৫টা থেকে চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কার্যক্রম চালু করা হয়। ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণে রোববার দুপুর ১২টা থেকে ফ্লাইট ওঠানামা বন্ধ ছিল।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট এই ঘূর্ণিঝড়টি রোববার রাত ৮টার দিকে উপকূলে আঘাত করে। এই ঝড়ের প্রভাবে গতকাল থেকে আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পটুয়াখালী, সাতক্ষীরা, ভোলা, চট্টগ্রাম, খুলনা, কুমিল্লা ও বরিশালে ৮ জেলায় মোট ১৩ জনের মারা যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।