ভৌগলিক অবস্থান ও জলবায়ুু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম দুর্যোগ প্রবণ দেশ হিসেবে পরিচিত। প্রতি বছর মে মাস আসলেই বঙ্গোপসাগরে বাড়ছে ঘূর্ণিঝড়ের প্রকোপ। গত দুই যুগে এমাসে নয়টি প্রলয়ঙ্করী ঝড় হয়েছে। এ দুর্যোগে সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও কমেছে প্রাণহানি।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়ের পূর্বাভাস এখন অন্তত পাঁচ দিন আগে দেওয়া হয়। তাই নিরাপদে থাকার প্রস্তুতি আগের তুলনায় বেশি সময় পাওয়া যাচ্ছে। এবারও মে মাসে তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। একশ বছরে এপ্রিল মে মাসে দেশে আঘাত হেনেছে ৬৫ ঘূর্ণিঝড়।
২০০৮ সালের ৩ মে মিয়ানমার উপকূলে আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস। এর খুব একটা প্রভাব পড়েনি বাংলাদেশে। ২০০৯ সালের ২৫ মে, আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় আইলা। পশ্চিমবঙ্গ ও খুলনার উপকূলে ঘণ্টায় এর বাতাসের গতিবেগ ছিল সর্বোচ্চ ৭০ থেকে ৯০ কিলোমিটার। সেবার প্রাণহানি ঘটে ১৯৩ জনের।
ঘূর্ণিঝড় মহাসেন নোয়াখালী-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত করেছিল ২০১৩ সালের ১৬ মে। এ সময় মৃত্যু হয় ১৭ জনের।
ঘূর্ণিঝড় রোয়ানু বরিশাল-চট্টগ্রাম উপকূলে আঘাত হেনেছিল ২০১৬ সালের ২১ মে। এতে চট্টগ্রামে ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল লক্ষাধিক পরিবার।
ঘূর্ণিঝড় মোরা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার উপকূলে আঘাত হানে ২০১৭ সালের ৩০ মে। ঘণ্টায় এর বাতাসের গতি ছিল ১১০ কিলোমিটার। মোরার প্রভাবে উপকূলে ব্যাপক ক্ষতি হয়।
২০১৯ সালের ২ ও ৩ মে ঘূর্ণিঝড় ফণীর আঘাতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়, আর প্রাণ হারায় ৯ জন। ফণী ভারতের ওড়িশা উপকূলে আঘাত হানে, পরে কলকাতা ও বাংলাদেশের উপর দিয়ে চলে যায়।
২০২০ সালের ২০ মে সুপার সাইক্লোন আম্ফান আঘাত হানে। এ সময় ২০ প্রাণহানি ও ব্যাপক সম্পদহানী ঘটে । সেবার সুন্দরবন ঢাল হয়ে বাঁচায় দেশের উপকূল।
২০২১ সালের ২৬ মে আঘাত হানে সাইক্লোন ইয়াস। ২০২২ সালের মে মাসে ঘূর্ণিঝড় আসানিতে দেশে কম হয় ক্ষয়ক্ষতি ।
এ বছর মে মাসের একই সময়ে ঘূর্ণিঝড় রিমাল দেশের উপকূল অতিক্রম করতে যাচ্ছে। রোববার দুপুরের পর এর অগ্রভাগের প্রভাব শুরু হতে পারে। সন্ধ্যায় এর কেন্দ্র উপকূল অতিক্রম করতে পারে ।
ঘূর্ণিঝড় সতর্কতায় পায়রা ও মোংলা সমুদ্রবন্দরকে ৭ নম্বর এবং কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরকে ৬ নম্বর বিপৎসংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অদিধপ্তর। উত্তর বঙ্গোপসাগরের মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে নিরাপদ অবস্থানে থাকতে বলা হয়েছে।
বিশ্বের ৩৫টি ভয়ঙ্কর মৌসুমী ঘূর্ণিঝড়ের ২৬টিই হয়েছে বঙ্গোপসাগরে। বর্ষার আগে সাগরে তাপমাত্রা ৪ থেকে ৬ ডিগ্রি বাড়ে। যে কারণে তৈরি হয় প্রচুর জলীয় বাষ্প।
বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়ে বাংলাদেশে লাখ লাখ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে নানা সময়ে, বিপুল ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছেন ঊপকূলীয় এলাকার বাসিন্দারা। তবে গত কয়েক দশকে বাংলাদেশের দুর্যোগ মোকাবিলার সক্ষমতা বৃদ্ধি পাওয়ায় ঝড়ে প্রাণহানি কমেছে।
আরও পড়ুন: